ভারতের মূল প্রতিপক্ষ কে? পাকিস্তান, না চিন? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বহুদিন ধরেই। কিন্তু এবার এই বিতর্কে পরিষ্কার বার্তা দিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (DIA)। তাদের সাম্প্রতিক ‘ওয়ার্ল্ড থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’-এ উঠে এসেছে ভারতের দুই বড় পড়শিকে ঘিরে বিস্ফোরক তথ্য।
পাকিস্তান এখন ততটা বড় হুমকি নয়!
DIA-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তান ভারতের জন্য একটি সীমিত মাথাব্যথা মাত্র। সন্ত্রাসবাদে মদত, সীমান্তে হামলা—এসব পরিচিত সমস্যা থাকলেও, সাম্প্রতিক কালে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো কড়া জবাবে পাকিস্তানের আগ্রাসন অনেকটাই দমন হয়েছে। ভবিষ্যতে যদি কোনও হামলা হয়, তারও জবাব আরও কড়া হবে, এমন বার্তা ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট।
রিপোর্টে মোদী সরকারের প্রতিরক্ষা কৌশলেরও প্রশংসা করা হয়েছে। DIA জানিয়েছে, পাকিস্তান এখন ভারতের কাছে তুলনামূলকভাবে দ্বিতীয় সারির হুমকি।
চিন এখনও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
তবে চিনের বিষয়ে DIA রিপোর্ট একেবারেই আশাবাদী নয়। বরং রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিন তার সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক শক্তিকে যেভাবে বাড়িয়ে চলেছে, তা ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকি। ২০২৫ সালের সামরিক বাজেটে চিন ২৪৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে, যা আগের চেয়ে ৫.২% বেশি। চিনের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ১,০০০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরি করা—যা গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। বর্তমানে চিনের হাতে রয়েছে প্রায় ৬০০টি পারমাণবিক অস্ত্র। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের ওপর চাপ বাড়ছেই।
পাকিস্তানকে সাহায্য করছে বেজিং
চিন শুধু নিজের শক্তিই বাড়াচ্ছে না, পাশাপাশি পাকিস্তানকেও সমানভাবে সাহায্য করে চলেছে। ব্যালেস্টিক মিসাইল তৈরি থেকে শুরু করে পরমাণু ভাণ্ডার আধুনিকীকরণ—সবেতেই চিনের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এমনকি পাকিস্তান-চিন যৌথ সামরিক মহড়া এবং অস্ত্র চুক্তিও এই মুহূর্তে চালু রয়েছে।
চিনের এই কৌশল ভারতের জন্য ডুয়েল হুমকি তৈরি করছে—একদিকে প্রত্যক্ষ সীমান্ত বিরোধ, অন্যদিকে পরোক্ষে পাকিস্তানকে উসকে দেওয়া।
সীমান্তে জারি উত্তেজনা
অরুণাচল প্রদেশের নাম পরিবর্তন নিয়ে সম্প্রতি আবারও ভারতের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে চিন। ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষে দুই দেশের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে পৌঁছয়। DIA রিপোর্টে জানানো হয়েছে, যদিও ২০২৩ সালে লাদাখের কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে উত্তেজনা কিছুটা কমেছে, তবে সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি।
ভারতও পিছিয়ে নেই
চিনের চাপের মোকাবিলায় ভারতও প্রতিরক্ষা শক্তিকে আরও মজবুত করছে। সম্প্রতি সফল হয়েছে অগ্নি-১ প্রাইম এবং অগ্নি-V MIRV ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা। দ্বিতীয় পরমাণু সাবমেরিন ‘INS আরিঘাট’ ইতিমধ্যেই নৌসেনার অংশ। পাশাপাশি, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক কূটনীতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করছে দিল্লি।
সব মিলিয়ে পাকিস্তান এখনও একটি নিরাপত্তা সমস্যা হলেও, ভারতের আসল ও দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হচ্ছে চিন। DIA রিপোর্টের এই সতর্কবার্তা শুধু কূটনৈতিক নয়, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও ভারতের সামনে নতুন করে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল।