মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বরাবরই অগ্নিসংযোগের কাঁচামাল ছিল। তবে সাম্প্রতিক ইরান–ইস্রায়েল সংঘাতের ঘটনায় নতুন করে শঙ্কা ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। যুদ্ধ নয়, বরং প্রযুক্তিনির্ভর প্রভাব বিস্তার ও কৌশলগত পাল্টা পদক্ষেপের মধ্যে দিয়েই বদলাচ্ছে সমগ্র অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ছবি।
প্রক্সি থেকে সরাসরি সংঘাতে ইরান
ইরান ও ইস্রায়েলের দ্বন্দ্বের ইতিহাস অনেক পুরনো হলেও, ২০২০ সালে কাসেম সোলেইমানির হত্যার পর থেকে ইরানের কৌশলে বড় রকমের পরিবর্তন দেখা যায়। বিপ্লবী গার্ডের Quds Force দীর্ঘদিন ধরেই নানা আরব অঞ্চলে ‘প্রক্সি যুদ্ধ’ চালিয়ে এসেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইরান সরাসরি সামরিক শক্তি প্রদর্শনে মনোযোগী হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইরান প্রায় ১৮০টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোঁড়ে ইস্রায়েলের দিকে। যদিও ইস্রায়েল তাদের আইরন ডোম ও মিসাইল ডিফেন্স ব্যবস্থায় অধিকাংশ হামলা প্রতিহত করে, প্রতিশোধ স্বরূপ দেশটি ইরানের একাধিক নিউক্লিয়ার ও সামরিক স্থাপনায় পাল্টা আঘাত হানে।
পাল্টা আঘাতে ইস্রায়েল
ইস্রায়েলের পাল্টা আঘাত ছিল নিখুঁত এবং কৌশলগত। ফরদো, নাতাঞ্জ, ইসহফানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে দেশটি একপ্রকার ইঙ্গিত দিয়েছে—পরমাণু সক্ষমতার পথে ইরানের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়া হবে যেকোনো মূল্যে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই হামলা সাধারণ নাগরিককে লক্ষ্য করে নয় বরং শুধুমাত্র সামরিক ও নিউক্লিয়ার স্থাপনাগুলিকে কেন্দ্র করে হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইস্রায়েলকে সরাসরি সমর্থন জানিয়েছে। অন্যদিকে, চীন এবং রাশিয়া মুখে নিরপেক্ষতা বজায় রাখলেও ইরানের আক্রমণাত্মক অবস্থানে সায় দেয়নি। এটি মধ্যপ্রাচ্যে চীন ও রাশিয়ার কৌশলগত আগ্রহের এক নতুন দিক তুলে ধরছে।
উপসাগরীয় আরব দেশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ
সৌদি আরব, ইউএই ও কাতারের মতো উপসাগরীয় আরব দেশগুলো ইতিমধ্যে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার লক্ষ্যে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা শুরু করেছে। এই দেশগুলির উদ্বেগ মূলত দুটি—অর্থনৈতিক স্থিতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা। অতএব, তাদের চেষ্টার মূল লক্ষ্য হলো দীর্ঘমেয়াদি সংঘর্ষ এড়িয়ে স্থিতিশীলতা রক্ষা।
মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রে নতুন অধ্যায়?
ইরান ও ইস্রায়েলের সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক মোড়। এ ঘটনা শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ভারসাম্য নতুনভাবে লিখছে। যেখানে পরমাণু সম্ভাবনা, যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি, এবং চীন–রাশিয়ার ভূমিকা এক নতুন মহাযুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন—এই সংঘর্ষ কি আরও বড় পরিসরে গড়াবে? নাকি কূটনৈতিক সমঝোতা একে থামিয়ে দেবে? সময়ই সেই উত্তর দেবে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—মধ্যপ্রাচ্য আর আগের মতো থাকছে না।