পৃথিবীর সব রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি—সেই প্রমাণ যেন আরও একবার মিলল অ্যান্টার্কটিকায়। বহু হাজার ফুট বরফের নিচ থেকে ভেসে এল এক অদ্ভুত রেডিও তরঙ্গ, যা তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার প্রচলিত ধারণার সঙ্গে একেবারেই মেলে না। ঘটনাটি রীতিমতো নাড়া দিয়েছে বৈজ্ঞানিক মহলে।
ANITA মিশনে ধরা পড়ল অস্বাভাবিক সংকেত
NASA-র উদ্যোগে চালানো হয়েছিল ANITA (Antarctic Impulsive Transient Antenna) নামের এক পরীক্ষামূলক প্রকল্প। আকাশে ভাসমান এক বিশাল বেলুনের সঙ্গে যুক্ত ছিল এই সংবেদনশীল যন্ত্র, যার কাজ ছিল বরফের নিচ থেকে আগত উচ্চশক্তির কণিকাগুলির সংকেত ধরা। সেই যন্ত্রই ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দুটি পৃথক সময়ে শনাক্ত করে এমন এক রেডিও সিগন্যাল, যা আসছে একেবারে নিচের দিক থেকে, প্রায় ৩০° কোণে।
নিউট্রিনো নয়, তাহলে কে পাঠাচ্ছে এই সংকেত?
প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, এই সংকেত হয়তো নিউট্রিনো কণার কারণে তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হল, নিউট্রিনোর মতো কণা যদি সত্যিই এত গভীর বরফ ও পাথরের মধ্য দিয়ে এসে এমন তরঙ্গ তৈরি করে, তবে তা বর্তমান পদার্থবিদ্যার মডেলের সঙ্গে যায় না। এত গভীর থেকে কোনও কণা আসবে, অথচ শোষিত হবে না—এমনটা বর্তমান বৈজ্ঞানিক ধারণায় অসম্ভব।
IceCube ও Pierre Auger পর্যবেক্ষণেও মিলল না সমর্থন
ANITA-র পাওয়া তথ্য যাচাই করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা সেই একই ধরনের সংকেত খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র—IceCube Neutrino Observatory (অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত) এবং Pierre Auger Observatory (আর্জেন্টিনায়)। কিন্তু, অবাক করা বিষয় হল—এই দুই বৃহৎ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রেও মিলল না ANITA-র ধরা সেই সিগন্যালের কোনও প্রতিরূপ।
ডার্ক ম্যাটার? না কি কোনও অজানা শক্তি?
এতদিন পর্যন্ত অজানা কসমিক রশ্মি বা নিউট্রিনোকেই এমন সংকেতের উৎস বলা হত। এখন বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, বিষয়টির সঙ্গে ডার্ক ম্যাটারের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, হয়তো এমন কোনও রেডিও-প্রসারণ পদ্ধতি রয়েছে, যা আমাদের এখনও জানা নেই। তবে, এখনও পর্যন্ত এই প্রশ্নের কোনও নির্দিষ্ট উত্তর নেই।
নতুন পর্যবেক্ষণ যন্ত্র PUEO-এর দিকে তাকিয়ে গবেষকরা
এই রহস্যের সমাধানে এখন বিজ্ঞানীরা ভরসা রাখছেন PUEO (Payload for Ultrahigh Energy Observations) নামের উন্নত পর্যবেক্ষণ যন্ত্রের উপর। এটি ANITA-রই উন্নততর সংস্করণ, যেটি আরও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এবং সংকেত বিশ্লেষণে বেশি দক্ষ। ভবিষ্যতে আরও স্পষ্ট তথ্য এনে দেবে বলেই আশা গবেষকদের।