ক্রিকেটের মাঠ মানেই উত্তেজনা, গ্যালারিতে হাততালি, আর উইকেট পড়লেই উল্লাস। কিন্তু যদি বলি, মাঠে খেলা বন্ধ হয়ে গেল কারণ সেখানে ছড়িয়ে আছে লেবু, ডিম আর তান্ত্রিক চিহ্ন? শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনাই ঘটেছে অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার নাল্লা চেরুভু মণ্ডলের মাঠে। স্থানীয়ভাবে একটি টুর্নামেন্ট চলছিল। প্রথম চারদিন সব ঠিকঠাকই চলেছে। কিন্তু পঞ্চম দিনে সকালে মাঠে পৌঁছনোর পরই খেলোয়াড়রা দেখতে পান, গোটা মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লেবু, ডিম, ধূপকাঠি, আর তান্ত্রিক নকশা। মাঠের মাঝখানে আঁকা রহস্যজনক মণ্ডল দেখে হকচকিয়ে যান সকলে। আতঙ্কে পড়ে যান খেলোয়াড়রা। এমনকি অনেকে বলতে শুরু করেন, ‘এটা কালোজাদু ছাড়া কিছু নয়!’
আতঙ্কে পিছু হঠলেন খেলোয়াড়রা
তান্ত্রিক এই দৃশ্য দেখে খেলার পরিবর্তে প্রাণ বাঁচানোই তখন প্রাধান্য পান খেলোয়াড়রা। কেউ ব্যাগ গুছিয়ে মাঠ ছাড়েন, কেউ আবার মাঠেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। আয়োজকরা সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচ স্থগিত ঘোষণা করেন। স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয়। বহু দর্শকও মাঠ থেকে সরে যান আতঙ্কে।
তদন্তে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য
ঘটনার তদন্তে নামে স্থানীয় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছিল, হয়তো কোনও ভক্ত অন্ধবিশ্বাসের বশে এমন কিছু করেছেন। কিন্তু পরে জানা যায়, পরিকল্পিতভাবে এই টুর্নামেন্ট বন্ধ করার জন্যই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল। তদন্তে পুলিশ গ্রেফতার করে এক ব্যক্তিকে, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনিই মাঠে ডিম-লেবু ছড়িয়ে রেখে কালোজাদুর আবহ তৈরি করেছিলেন। চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিছুদিন আগেও একই এলাকার এক মোবাইলের দোকানে একই ধরনের তান্ত্রিক কার্যকলাপ করার অভিযোগ উঠেছিল।
খেলার জগতে তান্ত্রিকতা: নতুন নয়, কিন্তু নিন্দনীয়
বিশ্বজুড়ে খেলার জগতে এমন বহু ঘটনা আছে যেখানে খেলোয়াড়রা বা সমর্থকেরা নানা ধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। যেমন, কোনও খেলোয়াড় খেলার দিনে একই মোজা পরেন, কেউ তাবিজ বা লাকি জার্সি পরেন। কিন্তু এমনতর তান্ত্রিক আয়োজন, যেখানে মাঠের পরিবেশকেই বিপজ্জনক করে তোলা হয়, তা নিঃসন্দেহে অপরাধমূলক। আয়োজক সংস্থার এক সদস্য বলেন, “আমরা ভাবতেই পারিনি খেলাকে কেন্দ্র করে কেউ এমন কাজ করতে পারে। এটা শুধু কুসংস্কার নয়, সরাসরি অপরাধ। আমরা নিরাপত্তা আরও বাড়াবো।”
আবারও কুসংস্কারের শিকার ক্রীড়াক্ষেত্র
ভারতের মতো দেশে, যেখানে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা জীবনধারার অংশ, সেখানে কুসংস্কার অনেক সময় খেলাধুলোকেও ছুঁয়ে যায়। বিশেষত গ্রামীণ বা আধা-শহুরে এলাকায় এই প্রবণতা বেশি। অনন্তপুরের এই ঘটনা তারই একটি নিদর্শন। যদিও আধুনিক ক্রীড়াজগতে এখন মনোবিদ, ক্রীড়া-বিজ্ঞান, এবং যুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণের প্রাধান্য বাড়ছে, তবুও কোথাও কোথাও তন্ত্র-মন্ত্রের ছায়া এখনও রয়ে গিয়েছে।
ক্রিকেটের মাঠে তান্ত্রিক কার্যকলাপ করে খেলা বন্ধ করার এই ঘটনা কেবল একদিনের বিভ্রাট নয়, বরং দেশের খেলাধুলোর ভবিষ্যতের ওপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিল। প্রশাসনকে যেমন কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, তেমনই সমাজকেও কুসংস্কার ও কালোজাদুর বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে। খেলার মাঠ হোক প্রতিযোগিতা, আবেগ ও সম্মানের স্থান—ভয় আর অন্ধবিশ্বাসের নয়।