সকালের শুরুটা অনেকেই করেন এক কাপ গরম গরম ব্ল্যাক কফি দিয়ে। বিশেষ করে যারা চা পছন্দ করেন না, তাঁদের কাছে কফিই একমাত্র ভরসা। আবার অনেকেই রয়েছেন যারা ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত খালি পেটে কফি পান করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই অভ্যাস দীর্ঘদিন ধরে চললে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে? বিশেষজ্ঞদের মতে, কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরের বিপাকক্রিয়া বাড়ালেও, খালি পেটে তা গ্রহণ করলে হতে পারে গুরুতর সমস্যা।
কী সমস্যা হতে পারে খালি পেটে কফি খেলে?
খালি পেটে কফি পান করলে পাকস্থলিতে অ্যাসিড নিঃসরণ বেড়ে যায়। ফলে হজমের গণ্ডগোল, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন খালি পেটে কফি পান করলে শরীরে দেখা দিতে পারে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি, যা স্নায়ুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে দেখা দিতে পারে ক্যালসিয়ামের অভাব, যার ফলে ভবিষ্যতে হাড়ের ক্ষয়, দুর্বলতা, এমনকি অস্টিওপোরোসিস পর্যন্ত হতে পারে।
কতবার কফি পান করা নিরাপদ?
কফিপ্রেমীরা দিনে একাধিকবার কফি পান করেন, কিন্তু কোনও কিছুই মাত্রার অতিরিক্ত ভালো নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনে ২-৩ কাপ কফি পান করা নিরাপদ। এর বেশি হলেই তা শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন ইনটেক ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ, রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ঘটাতে পারে।
কফি খাওয়ার সঠিক সময় কী?
খালি পেটে কফি একেবারেই নয়। কফি পান করার সবচেয়ে ভালো সময় হল—
-
সকালের খাবারের ৩০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা পরে
-
রাতের খাবারের অন্তত ৩০ মিনিট পরে
এই সময় কফি খেলে তা বিপাকক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে এবং হজমেও সহায়ক হয়। তবে একসঙ্গে ভারী খাবার ও কফি এড়িয়ে চলাই ভালো।
ওজন কমানোর জন্য কি ব্ল্যাক কফি সত্যিই উপকারী?
হ্যাঁ, তবে নিয়ম মেনে। ব্ল্যাক কফিতে ক্যালোরি কম, এবং এতে ক্যাফেইন থাকার ফলে মেটাবলিজম বাড়ে, যা ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু খালি পেটে পান করলেই যে ওজন কমবে, এমনটা নয়। বরং এতে শরীরে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।
ব্ল্যাক কফি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল—এই কথা সত্যি, কিন্তু সেটা নির্দিষ্ট সময় ও পরিমাণে পান করলেই। খালি পেটে কফি খাওয়ার অভ্যাস দীর্ঘদিন ধরে চললে তা শরীরে নানা ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি তৈরি করতে পারে। তাই রোগা হওয়ার আশায় যদি আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কফি পান করেন, তাহলে এখনই সতর্ক হোন।
সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতিতে কফি পানই হতে পারে আপনার সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।