কমেডিয়ান কপিল শর্মার সাম্প্রতিক পরিবর্তন দেখে অনেকেই অবাক। অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে তিনি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ফিট। কিন্তু এই আকস্মিক পরিবর্তনের পিছনে রহস্যটা কী? জানা গিয়েছে, এর পিছনে রয়েছে এক বিশেষ ‘২১-২১-২১ নিয়ম’, যাঁর সাহায্যে মাত্র ৬৩ দিনেই কপিল তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। এই যাত্রাপথে তাঁর পথপ্রদর্শক ছিলেন তারকাদের ফিটনেস প্রশিক্ষক যোগেশ ভাটেজা।
যোগেশের মতে, কপিলের মতো যাঁরা প্রথমবার ফিটনেস চর্চা শুরু করছেন, তাঁদের জন্য এই ৬৩ দিনের প্রোগ্রামটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই নিয়মের মূল ভিত্তি হল ধীরে ধীরে এবং একেকটি দিকে মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছনো, যাতে শরীর ও মন দুটোই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
প্রোগ্রামের প্রথম ২১ দিন: শরীরকে প্রস্তুত করা
এই পদ্ধতির প্রথম ধাপটি হল শরীরকে ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুত করা। প্রশিক্ষক যোগেশ জানিয়েছেন, প্রথম ২১ দিন কপিলকে কোনও কঠিন ব্যায়াম বা ডায়েট করতে হয়নি। তাঁর ট্রেনিং শুরু হয়েছিল সাধারণ স্ট্রেচিং দিয়ে, যা শরীরকে ধীরে ধীরে নমনীয় করে তোলে। এই পর্যায়ে মূল লক্ষ্য ছিল শরীরের প্রতিটি পেশিকে সচল করা এবং শরীরচর্চার জন্য একটি ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করা। কোনও রকম ডায়েটের চাপ না থাকায়, শরীরচর্চার প্রতি অনীহা তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকে না।
দ্বিতীয় ২১ দিন: খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
প্রথম ধাপ সফলভাবে শেষ হওয়ার পর, দ্বিতীয় ২১ দিনের পর্বে মনোযোগ দেওয়া হয় খাদ্যাভ্যাসের উপর। তবে এখানেও কার্বোহাইড্রেট বা ক্যালোরি বাদ দেওয়ার মতো কঠোর নিয়ম নেই। বরং ছোট ছোট পরিবর্তনে জোর দেওয়া হয়। যেমন, রাতে দুধ পান করলে অনেকের অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা হয়, তাই সকালে দুধ পানের পরামর্শ দেওয়া হয়। আবার, চায়ের মধ্যে চিনির পরিমাণ কমানো বা খাবারের পর অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করার মতো ছোট ছোট পরিবর্তন আনা হয়। এর ফলে শরীর কোনও রকম আকস্মিক পরিবর্তনের শিকার হয় না এবং ধীরে ধীরে নতুন খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
শেষ ২১ দিন: মানসিক নির্ভরতা কমানো
ফিটনেস যাত্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল মানসিক নিয়ন্ত্রণ। এই ৬৩ দিনের প্রোগ্রামের শেষ ২১ দিনে মানসিক নির্ভরতা কমানোর উপর জোর দেওয়া হয়। অতিরিক্ত খাওয়া, মিষ্টির প্রতি আসক্তি বা অন্য কোনও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের উপর মানসিক নির্ভরতা কমানোই ছিল এই পর্বের মূল লক্ষ্য। যোগেশের মতে, প্রায় ৪২ দিন পার করার পরেই শরীরে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যা বাকি পথ চলায় উৎসাহ জোগায়। শেষ পর্যন্ত ৬৩ দিন পরে, শুধুমাত্র শারীরিক পরিবর্তনই নয়, মানসিকভাবেও একজন ব্যক্তি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং নিজের ফিটনেস যাত্রা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্ব-প্রণোদিত হন।
এইভাবেই কোনও কঠোর নিয়ম ছাড়াই, শুধুমাত্র একটি পরিকল্পিত এবং ধীর পদ্ধতির মাধ্যমে কপিল শর্মা তাঁর ফিটনেস লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। এই ‘২১-২১-২১ নিয়ম’ প্রমাণ করে যে, সঠিক পথে হাঁটলে এবং ধৈর্য ধরলে যে কেউই সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক। যে কোনও ফিটনেস বা ডায়েট প্রোগ্রাম শুরু করার আগে অনুগ্রহ করে চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।