সম্প্রতি কসবা ল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে রীতিমতো তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সেই ঘটনার আঁচ এখনও ঠাণ্ডা হয়নি, এর মধ্যেই বীরভূমে ফের শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঘিরে চাঞ্চল্য। অভিযোগ, এক তৃণমূল নেত্রীকে প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি করেছে দলেরই একাংশের নেতারা। ঘটনায় গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে দলীয় গোষ্ঠী কোন্দলকে কেন্দ্র করেই।
রাস্তার মধ্যে টানাহেঁচড়া, অপমান, নিগ্রহ
সূত্রের খবর, রবিবার বিকেলে সিউড়ি দুই ব্লকের এক তৃণমূল নেত্রীকে ডাকা হয়েছিল কিছু দলীয় নথিতে সই করার জন্য। অভিযোগ, তখনই পরিকল্পিতভাবে আরেক গোষ্ঠীর নেতারা এসে তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে। রাস্তার মাঝে চলে টানাহেঁচড়া, কুরুচিকর মন্তব্য, এমনকি তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। নির্যাতিতার দাবি, তাঁকে ঘিরে দলীয় কর্মীরা এমন ভাষা ব্যবহার করেছে যা তাঁর চরিত্র হননের চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। এতেই থেমে থাকেনি হেনস্থা—অভিযোগ, তাঁর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনাও দেওয়া হয়।
প্রাণে বাঁচলেও, হাসপাতালে গুরুতর আহত নেত্রী
চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে ওই তৃণমূল নেত্রী জানিয়েছেন, “আমাকে প্রকাশ্যে অপমান করা হয়েছে। বাধা দিতে গেলে আমার সঙ্গীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। আমি কোনওরকমে পালিয়ে এসে প্রাণে বাঁচি।” বর্তমানে তিনি এবং তাঁর সহকর্মী চিকিৎসাধীন রয়েছেন সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বদলে দায় এড়ানোর চেষ্টা?
এই ঘটনায় অভিযুক্তদের নাম উঠে এসেছে ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠদের তালিকায়। যদিও, অভিযুক্তদের তরফে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, “আমরা কি পাগল নাকি? দিনের আলোয় এমন কিছু করব কেন?” এদিকে, এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা নতুন নয় সিউড়ি দুই ব্লকে। এর আগেও একাধিকবার হাতাহাতির ছবি উঠে এসেছে মিডিয়ার ক্যামেরায়।
বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষ: “তৃণমূলের মুষলপর্ব শুরু”
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূলকে একহাত নিয়েছে বিজেপি। দলের বীরভূম জেলা নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটাই প্রমাণ করে তৃণমূলের ভিত কতটা দুর্বল। নিজেরাই নিজেদের মারছে এখন। জনগণ সব বুঝে গিয়েছে। নির্বাচনের আগেই তৃণমূল অতীত হয়ে যাবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আগেও আমাদের মনোনয়ন জমা দিতে গেলে নুরুল বাহিনীর হামলার শিকার হতে হয়েছিল। এবার নিজেরাই নিজের দলের মহিলাকর্মীদের অপমান করছে।”
রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সংকেত?
রাজ্য রাজনীতির আবহে যখন একের পর এক মহিলা নির্যাতনের অভিযোগে শাসকদল চাপে, তখন বীরভূমের এই ঘটনা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর। মহিলা নেত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, বিশেষ করে যখন অভিযুক্ত নিজ দলেরই সদস্য। এখন দেখার, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দল কী পদক্ষেপ নেয়, না কি অন্য ঘটনা দিয়ে এই অভিযোগকেই চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়!