ওষুধের নামে বিষ! কলকাতার বাজারে ছড়িয়ে পড়েছিল একাধিক জাল ও নিম্নমানের জীবনদায়ী ওষুধ। পরিস্থিতি এতটাই আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছিল যে শহরের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে চরম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৯৪টি জীবনদায়ী ওষুধের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সমস্ত ওষুধের মধ্যে বেশ কিছু হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণকারী গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ছিল, যেগুলি মানুষের প্রাণ রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে সেগুলির বেশ কয়েকটি ব্যাচ জাল বা নকল বলে শনাক্ত হয়। হাওড়ার আমতা এলাকার একটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ₹১৭ লক্ষ মূল্যের জাল ওষুধ বাজেয়াপ্ত করা হয়। এর পাশাপাশি কলকাতার কেন্দ্রীয় হোলসেল মার্কেট থেকেও উদ্ধার হয় প্রায় ₹২০ লক্ষ টাকার জাল জীবনদায়ী ওষুধ।
বহিরাজ্য থেকে জাল ব্যাচের সূত্র
প্রশাসনের তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই জাল ওষুধের ব্যাচগুলির উৎস মূলত বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা ও মুম্বইয়ের কিছু নির্দিষ্ট জায়গা। ওষুধের মোড়কে থাকা লোগো ও ব্যাচ নম্বর নকল করা হয়েছে, ফলে সরবরাহকারী সংস্থার নাম দেখে ওষুধ সঠিক বলে মনে হয়েছে।
কড়া নির্দেশিকা জারি
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার ছয় দফা নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। এর মধ্যে অন্যতম—
-
প্রতিটি Schedule H2 ওষুধ QR কোড স্ক্যান করে যাচাই করতে হবে।
-
ওষুধ সরবরাহকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও GST নম্বর যাচাই বাধ্যতামূলক।
-
সমস্ত ফার্মেসিকে সন্দেহজনক ওষুধ সম্পর্কে দ্রুত প্রশাসনকে জানাতে বলা হয়েছে।
-
একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে যেখানে সাধারণ মানুষও তাদের সন্দেহ জানাতে পারবেন।
আন্তঃরাজ্য সমন্বয়
রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল দফতর প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে জাল ওষুধ সরবরাহের মূল উৎস চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় স্তরের অনুমোদন প্রাপ্ত সংস্থাগুলিকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে যাতে ওষুধের গুণমান নিয়ন্ত্রণে একযোগে কাজ করা যায়। মানুষের জীবন নিয়ে কোনওরকম খেলা বরদাস্ত করা হবে না—এটাই বার্তা দিয়েছে প্রশাসন। একদিকে যেমন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ওষুধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তেমনই নতুন করে নিয়ম চালু করে ভবিষ্যতের বিপদ এড়ানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনা ফের প্রমাণ করল, ওষুধ কিনতে গিয়ে শুধু ব্র্যান্ড নয়, যাচাই-বাছাই করাও অত্যন্ত জরুরি।