দুই দিন আগেই দক্ষিণবঙ্গজুড়ে বৃষ্টিতে কার্যত ধস নেমেছিল জনজীবনে। অনেকেই ভেবেছিলেন, সপ্তাহের শেষভাগে হয়তো একটু স্বস্তি মিলবে। কিন্তু রবিবার বিকেলের মধ্যেই ফের চমকে দিল আলিপুর হাওয়া অফিস। নতুন করে আবার নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে। আর তার জেরেই ফের ঘনিয়ে আসছে বৃষ্টি।
নতুন করে নিম্নচাপ, কোনদিকে এগোচ্ছে?
আবহাওয়াবিদদের মতে, নিম্নচাপটি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ উপকূলের কাছে এবং সেটি ধীরে ধীরে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এটি ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড অভিমুখে এগোবে। তবে সেই গতিপথের প্রভাব সরাসরি পড়বে দক্ষিণবঙ্গে। ফলে আজ সোমবার অর্থাৎ ৩০ জুন থেকে ফের বৃষ্টিপাত শুরু হবে রাজ্যে। এর মধ্যে কিছু জেলায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।
কোন জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস?
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলিতে। এই জেলাগুলিতে কোথাও কোথাও বৃষ্টির পরিমাণ ৭০ থেকে ১১০ মিলিমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। বাকি জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকছে। কলকাতা ও আশপাশে দিনভর হালকা বৃষ্টি চলবে, সঙ্গে কখনও কখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টিও।
উত্তরবঙ্গেও সতর্কতা, কিন্তু তীব্রতা কম
উত্তরবঙ্গে দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার—এই তিন জেলায় ভারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি হয়েছে। তবে অন্য জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে বলেই পূর্বাভাস। তবে পাহাড়ি অঞ্চলে অতিবৃষ্টির ফলে ধস নামার আশঙ্কা থাকায়, সেখানকার প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
মৎস্যজীবীদের জন্য বড় বার্তা
নিম্নচাপের জেরে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠতে পারে বলে অনুমান আবহাওয়াবিদদের। তাই সোমবার পর্যন্ত কোনও অবস্থাতেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও উপকূলবর্তী জেলা প্রশাসনকে এই বিষয়ে আগাম ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে দিঘা, কাঁথি, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ ইত্যাদি এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে মিলবে স্বস্তি?
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, ১ জুলাই থেকে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমবে। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পুরুলিয়াতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। তারপর রাজ্যজুড়ে আবহাওয়া কিছুটা উন্নতির দিকে যেতে পারে।তবে আগামী কয়েকদিন সকালের দিকে রোদ উঠলেও দুপুর গড়াতেই মেঘ জমার প্রবণতা থাকবে বলেই জানিয়েছে আলিপুর।
গত সপ্তাহে বৃষ্টির জেরে বহু এলাকায় জল জমে গিয়েছিল। রাস্তাঘাট কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল। ফলে প্রশাসনের এখনই প্রস্তুতি শুরু করা জরুরি। রাস্তার নিকাশি, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এবং বিদ্যুৎ সংযোগ—সব ক্ষেত্রেই নজর দিতে হবে। বেহালা, আনন্দপুর, খিদিরপুর, টালা—কলকাতার এইসব জলবন্দি-প্রবণ অঞ্চলে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুরসভাকে বার্তা দেওয়া হয়েছে।