নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ নিয়ে ফের রাজনৈতিক মঞ্চে বিতর্ক। ভোটার তালিকা সংশোধনের নির্দেশিকা ঘিরে এবার তীব্র অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রকৃতপক্ষে একটি ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ’।
‘গরিব মানুষ চাপে পড়বে’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, নতুন নিয়ম অনুযায়ী ভোটারদের জন্মশংসাপত্র বা তাঁদের বাবা-মায়ের জন্মনথি জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের বহু গরিব নাগরিক এই ধরনের কাগজপত্রে অভ্যস্ত নন। ফলে বাস্তবে অনেকের ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে তিনি ‘ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।
‘NRC-এর ছায়া পড়ছে’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “এই ভোটার তালিকা সংশোধন ঠিক যেন NRC-এর মতো—ভোটারদের যাচাইয়ের নামে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কৌশল।” তাঁর মতে, কিছু বিশেষ গোষ্ঠী বা এলাকা লক্ষ করে এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে, যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটভিত্তি শক্তিশালী।
‘ভোটার রিটেইলিং’ ও ‘গোস্ট ভোটার’ তত্ত্ব
তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ কার্যত ভোটার রিটেইলিংয়ের পরিকল্পনা। তৃণমূলের মূল সমর্থকদের বাদ দিয়ে ‘আউটসাইডার’ বা ভুয়ো ভোটারদের নাম তালিকায় তোলার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, “গোস্ট ভোটার তৈরি করে গণতন্ত্রকে প্রশ্নের মুখে ফেলা হচ্ছে।”
বিরোধীদেরও প্রতিক্রিয়া
মমতার এই মন্তব্যে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। কিছু বিরোধী দল এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে বলেছে, এতে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। যদিও কমিশনের তরফে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
‘গণতন্ত্রের উপর আঘাত’
মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলে এসেছেন—নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপ ‘গণতন্ত্রের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেওয়ার সামিল’। তিনি আরও বলেছেন, রাজ্য সরকার এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে কমিশনের সঙ্গে কথা বলবে। নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশে বলা হয়েছে, ভোটারদের নতুন করে যাচাই করতে হবে এবং প্রমাণ হিসেবে নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র বা জন্মনথি জমা দিতে হবে। তবে এই বিষয়টি এখন রাজ্য রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় ইস্যু হয়ে উঠেছে।