নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই ঘনিয়ে আসছে রাজনীতির উত্তাপ। একের পর এক নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে রাজ্যের শাসক দল। ঠিক সেই আবহেই ফের শিরোনামে উঠে এল বহু চর্চিত ও জনপ্রিয় ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প। জানা যাচ্ছে, ভোটের আগেই এই প্রকল্পে ভাতার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার।
বর্তমানে এই প্রকল্পের অধীনে সাধারণ শ্রেণির মহিলারা পান মাসে ১,০০০ টাকা এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মহিলারা পান ১,৫০০ টাকা। তবে প্রশাসনের অন্দরমহল থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, খুব শীঘ্রই এই ভাতা যথাক্রমে ১,৫০০ এবং ২,০০০ টাকায় উন্নীত হতে চলেছে।
নির্বাচনের আগেই তুফান তুলে দিতে চায় শাসক দল
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন এখন অনেকটাই সামনে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, যা শুধুমাত্র প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক কৌশলের দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামীণ ও নিম্নবিত্ত মহিলাদের মধ্যে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প আশার আলো দেখিয়েছে। বহু মহিলার হাতে মাসের শুরুতে এককালীন অর্থ পৌঁছানো শুধু আর্থিক নয়, সামাজিক দিক থেকেও এক বড় পরিবর্তন এনেছে।
নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এখন তৃণমূল কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য, এই শ্রেণির নারীদের আরও বেশি করে নিজেদের পাশে টেনে আনা। তাই এই প্রকল্পের ভাতা বাড়ানোর মাধ্যমে ভোটব্যাঙ্ক আরও শক্তিশালী করতেই চাইছে শাসক শিবির, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কবে থেকে চালু হতে পারে নতুন ভাতা?
সরকারি ভাবে এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত ঘোষণা না হলেও, প্রশাসনের একাধিক স্তরে এই সংক্রান্ত আলোচনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অনুমান, জুলাই মাস থেকেই এই নতুন ভাতার কার্যকারিতা শুরু হতে পারে। যদিও অর্থ দফতরের অনুমোদন এখনও বাকি, তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নারীশক্তি’কে ঘিরে বারবার যে বার্তা উঠে এসেছে, তা দেখেই অনেকেই বলছেন—এই সিদ্ধান্ত প্রায় নিশ্চিত।
সামাজিক প্রভাব কতটা গভীর?
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে রাজ্যের গ্রামীণ মহিলারা অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। অনেকেই বলছেন, বাজার করার খরচ থেকে শুরু করে সন্তানের পড়াশোনার খরচের একাংশ এই ভাতার টাকাতেই সামলানো যায়। সেই অর্থে এই প্রকল্প শুধু সরকারের ‘উপহার’ নয়, বহু পরিবারের জন্য ‘নিয়মিত রোজগার’-এর মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে যদি ভাতা বাড়ে, তবে তা রাজ্যের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় আরও গভীর প্রভাব ফেলবে, বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া কী?
যদিও সরকারিভাবে ঘোষণা না হলেও, খবর ছড়াতেই বিরোধী রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। কেউ কেউ একে ভোটের আগে ‘ঘুষের চেষ্টার’ তকমা দিতে শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, তৃণমূল সরকারের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে—নারীদের শক্তিকে পাশে না পেলে টিকে থাকা অসম্ভব।
উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প নিয়ে রাজ্যবাসীর মধ্যে যে চর্চা চলছে, তা নিছক একটি সরকারি প্রকল্পের আলোচনা নয়, বরং তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণ গঠনের অন্যতম মেরুদণ্ড হতে চলেছে। তাই আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই যদি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা করেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
বলে রাখা ভালো, উন্নয়নের এই লড়াইয়ে অর্থই শেষ কথা নয়—কে কতটা মন জয় করতে পারে, সেটাই ঠিক করবে ভোটের ফলাফল। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে বাড়তি ভাতা সেই মন জয়ের এক বড় অস্ত্র হয়ে উঠছে, তাতে সন্দেহ নেই।