Plane Crash : যেন গোটা পৃথিবীর আকাশই একসঙ্গে রোষে উঠেছে। ভারতের আমেদাবাদে ভয়ঙ্কর বিমান দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আমেরিকায় ঘটল আরেকটি ভয়াবহ বিমান সংক্রান্ত অঘটন। তবে সৌভাগ্যবশত এখানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
বস্টনের লোগান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে পিছলে পড়ল জেটব্লু সংস্থার একটি বিমান। বিমানে ৩১২ জন যাত্রী ছিলেন। আচমকাই উড়ানটি রানওয়ের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চলে যায় পাশের ঘাসের দিকে।
রানওয়েতে নামতেই পিছলে গেল বিমান
জেটব্লু ফ্লাইটটি রুটিনমাফিক নিউ ইয়র্ক থেকে বস্টনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। স্থানীয় সময় অনুযায়ী বিকেল চারটে নাগাদ বিমানটি বস্টনে অবতরণ করে। তবে নামার সময় হঠাৎই রানওয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায় পাইলট। উচ্চগতির কারণে বিমানটি রানওয়ের শেষপ্রান্তে গিয়ে পিছলে পড়ে পাশের ঘাসের জমিতে।
তবে আশ্চর্যের বিষয়, একটিও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। যাত্রীদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা প্রথমে বুঝতেই পারেননি কী ঘটছে। হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি, আর তারপর বিমানের গতি কমে যাওয়ায় সকলে জানলার বাইরে তাকিয়ে বোঝেন—এটা তো ঘাস, রানওয়ে নয়!
পাইলটের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তায় বড় বিপদ থেকে রক্ষা
বিমানের পাইলট ও ক্রুদের বুদ্ধিমত্তাই হয়তো রক্ষা করল শত শত প্রাণ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাইলটের দক্ষতা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্যই এই পরিস্থিতিতে বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যাত্রীরা বিমান থেকে নিরাপদেই বেরিয়ে আসেন।
জেটব্লু-র তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, “আমাদের ফ্লাইট 689, নিউ ইয়র্ক থেকে বোস্টনগামী, অবতরণের সময় রানওয়ের শেষ প্রান্তে গিয়ে থেমে যায়। কোনও যাত্রী আহত হননি। আমরা প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি।”
কী কারণে এই দুর্ঘটনা? তদন্ত শুরু এফএএ-এর
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তদন্তে নেমেছে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA)। প্রাথমিক অনুমান, বৃষ্টির কারণে রানওয়ে ভেজা ছিল এবং সেইজন্যই বিমানের চাকা স্লিপ করে যায়। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেটব্লুর বিশেষজ্ঞ দল।
এফএএ-র তরফে জানানো হয়েছে, বিমানটির ব্ল্যাক বক্স পরীক্ষা করে পাইলটের শেষ কথোপকথন, অবতরণের সময়ের স্পিড, ব্রেকিং সিস্টেম, ওয়ার্নিং সিগন্যাল—সব কিছু বিশ্লেষণ করা হবে।
যাত্রীদের অভিজ্ঞতা: “মনে হচ্ছিল এবার বোধহয় সব শেষ!”
এক যাত্রী বলেন, “আমরা ভাবতেও পারিনি যে এমন কিছু ঘটবে। হঠাৎ এক ঝাঁকুনি দিয়ে সব কেঁপে উঠল। অনেকেই আতঙ্কে চিৎকার করে উঠেছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝলাম, বেঁচে গেছি।”আরেক যাত্রী, বছর পঁয়ত্রিশের জুলিয়া হ্যারিস বলেন, “আমি চোখ বন্ধ করেই প্রার্থনা করছিলাম। জীবনে এমন ভয় পাইনি আগে।”
ভারত-আমেরিকা—আকাশপথে যেন অশনি সংকেত
এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই ভারতের গুজরাটে ঘটে গেছে এক ভয়ঙ্কর বিমান দুর্ঘটনা, যেখানে প্রায় ২৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার সেই ভয়াবহ ক্র্যাশের ক্ষত এখনও তাজা। এর মাঝেই আমেরিকায় জেটব্লু-র এই ঘটনা যেন প্রমাণ করে দিল, আকাশে যেন আজও অশান্তি বিরাজ করছে।
বিশ্বজুড়ে বিমান সংস্থাগুলির কাছে এটি একটি বড় সতর্কবার্তা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন প্রশ্ন একটাই—আর কত দুর্ঘটনা হলে নড়েচড়ে বসবে বিমাননিরাপত্তা দপ্তর?