কলকাতা, নামেই শান্তির বার্তা। বীরভূমের দুই গোষ্ঠীকে মুখোমুখি বসিয়ে আলোচনার টেবিলে মিলনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব কি বদলাল? বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রকাশ্যে এলো দুই বিপরীত পক্ষের AI-চালিত ভিডিও—একটিতে অনুব্রত মণ্ডলকে জড়িয়ে ধরছে বাঘ, আর অন্যটিতে কাজল শেখের পাশে হাঁটছে গর্জনরত সিংহ!
AI ভিডিওতে ‘পশু শক্তি’ রূপে গোষ্ঠী রাজনীতি
একদিকে বাঘ, যা দীর্ঘদিন ধরে অনুব্রত মণ্ডলের প্রতীক হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে সিংহ, কাজল শেখের তরফে উত্থাপিত প্রতীক—দূরদর্শীতা, শক্তি ও নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত বহন করে। বাঘ আর সিংহের এই ভিডিওর যুদ্ধ যেন বাস্তব রাজনৈতিক টানাপড়েনের প্রতিচ্ছবি। ভিডিও দু’টিতেই রয়েছে পরোক্ষ বার্তা, কোথাও কেষ্টর পুরনো দাপটের স্মৃতি টেনে আনা হয়েছে, তো অন্যটিতে কাজলের আগমন বার্তা—’নতুন দিনের সূচনা’।
কী বার্তা দিল এই দুই ভিডিও?
বাঘের ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, অনুব্রতর ছবি, পেছনে তৃণমূলের ঝান্ডা, আর সামনে একটি বিশালাকৃতি বাঘ এসে তাঁকে আলিঙ্গন করছে। বার্তা একটাই—কেষ্টই এখনও রাজা। অন্যদিকে, কাজলের ভিডিওতে সিংহের সাহচর্যে কাজল শেখের উদয়, শান্ত-গম্ভীর মুখে দৃপ্ত পদক্ষেপ, যেন বলতে চাইছে—’নেতৃত্ব বদল এখন সময়ের দাবি’।
শান্তি বৈঠক ছিল শুধুই ‘প্রতীকী’?
কলকাতার বৈঠকে দুই পক্ষের উপস্থিতি থাকলেও পরস্পরের প্রতি দুরত্ব ও অবিশ্বাস ছিল স্পষ্ট। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল ভোটের আগে বীরভূমে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রশমিত করা। তবে বৈঠক শেষ হতেই এমন দুই ভিডিওর প্রকাশ অনেককেই ভাবিয়ে তুলছে—তবে কি এই ‘শান্তি’ কেবলই দেখনদারি?
রাজনৈতিক স্তরে চাপানউতোর
রাজ্য নেতৃত্বের কাছে এটি এখন বড় চিন্তার বিষয়। একদিকে অনুব্রত এখনও জেলবন্দি, তবু তার ছায়া বীরভূমে অটুট। অন্যদিকে কাজল শেখ ধীরে ধীরে নিজের জমি পাকা করছেন—তৃণমূলেরই ছত্রছায়ায়। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এবার গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্য সংঘর্ষে পরিণত হবে?
AI ভিডিও: রাজনীতির নতুন মারণাস্ত্র?
এই ঘটনা আরও একবার দেখিয়ে দিল, AI কনটেন্ট কত দ্রুত রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে উঠছে। আবেগ, প্রতীক এবং বার্তার মিশেলে তৈরি ভিডিওগুলো রীতিমতো ‘ডিজিটাল প্রোপাগান্ডা’র দৃষ্টান্ত। অনেকের মতে, এগুলো এখন আর নিছক কৌতুক বা মিম নয়—বরং জনমত গঠনের কার্যকরী অস্ত্র।
বীরভূমের রাজনীতিতে বাঘ বনাম সিংহের এই যুদ্ধ এখন শুধুই ভিডিওর সীমায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি স্পষ্টভাবে ভবিষ্যতের সংঘর্ষের ইঙ্গিত। কলকাতার বৈঠক আদৌ কতটা ফলপ্রসূ, তা জানতে আর কিছুদিন অপেক্ষা করলেই বোঝা যাবে। তবে এখনই স্পষ্ট—বাঘ যদি পুরনো শক্তির প্রতীক হয়, সিংহ তার বিকল্প পথের বার্তা। আর এই দুই শক্তির লড়াই যে দীর্ঘ হবে, তা বলাই বাহুল্য।