TRENDS
হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে গেল ল্যাপটপ? কী করবেন এখনই জেনে নিন
সাধ্যের মধ্যে সাশ্রয়ী বাইক খুজছেন! রইল ১ লাখের কমে সেরা কিছু সন্ধান

একসঙ্গে দাহ করলেই শান্তি… সুইসাইড নোটে করুণ আবেদন কসবার দম্পতির

কসবার ভাট্টাচার্য দম্পতি আর্থিক অনটন ও ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে আত্মঘাতী হলেন। সুইসাইড নোটে তিনজনের একসঙ্গে দাহের আর্জি জানালেন—চাঞ্চল্য ছড়াল রাজডাঙায়।

Debapriya Nandi Sarkar

বাড়ির দরজা বন্ধ ছিল অনেকক্ষণ। কেউ বেরোচ্ছেন না, কোনও সাড়াও নেই। প্রতিবেশীরা বুঝেছিলেন কিছু একটা অস্বাভাবিক। শেষমেশ খবর যায় পুলিশের কাছে। কলকাতার কসবার রাজডাঙার একটি ভাড়াবাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তিনটি নিথর দেহ—ভট্টাচার্য দম্পতি এবং তাঁদের বিশেষভাবে সক্ষম একমাত্র ছেলে আয়ুষ্মান।

Advertisements
Whatsapp-color Created with Sketch. গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে এখনই যুক্ত হোন 👉🏻
Join Now

ঋণের জালে জর্জরিত, ছেলের ভবিষ্যৎ ঘিরে তীব্র দুশ্চিন্তা

৭০ বছরের স্মরজিৎ ভট্টাচার্য ও ৬৮ বছরের গার্গী ভট্টাচার্য-এর জীবনের একমাত্র আলো ছিল তাঁদের ৩৮ বছরের ছেলে আয়ুষ্মান, যিনি বিশেষভাবে সক্ষম। ছেলের চিকিৎসা ও সেবা-শুশ্রূষায় তাঁদের সমস্ত সঞ্চয় শেষ হয়ে গিয়েছিল। উপরন্তু, চিকিৎসা ও চলতি জীবনের খরচ মেটাতে গিয়ে মোটা অঙ্কের ধার হয়ে যায় বাজারে। একদিকে ঋণের চাপ, অন্যদিকে ছেলে না থাকলে তার ভবিষ্যৎ—এই দুইয়ের চাপে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন দম্পতি।

ঘরের ভিতর মিলল চিরবিদায়ের চিঠি

পুলিশ যখন ঘরে ঢোকে, তখন তিনটি দেহ পাশাপাশি বিছানায়। কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। প্রাথমিক ময়নাতদন্তে জানা গেছে, তিনজনেরই গলায় নন কনটিনিউয়াস লিগেচার মার্কস রয়েছে, যা আত্মহত্যার পদ্ধতির সঙ্গেই মেলে। ঘরে মেলে একটি সুইসাইড নোট। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় লেখা— “আমরা যদি একসঙ্গে দাহ হতে পারি, তবেই শান্তি পাব।” এই নোটে সই রয়েছে স্মরজিৎ ও গার্গীর।

Whatsapp-color Created with Sketch. সেরা খবরগুলো মোবাইলে পেতে এখনই যুক্ত হোন👉🏻
Join Now

“ঋণের পরিমাণ জানি না, তবে ভাড়াটাও দিতে পারছিলেন না…”

স্মরজিৎবাবুর এক আত্মীয় জানালেন, একসময় কসবার বকুলতলায় তাঁদের নিজস্ব বাড়ি ছিল। প্রায় ২০ বছর আগে তা বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে ভাড়াবাড়িতেই বসবাস করছিলেন। রাজডাঙার যেই ফ্ল্যাটে তাঁরা থাকতেন, তার ভাড়াও সম্প্রতি মেটাতে পারছিলেন না। কোনও সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন কি না, তাও এখনও স্পষ্ট নয়। তবে আত্মীয়রা জানাচ্ছেন, অর্থকষ্ট নিয়ে তাঁরা কখনও খুব বেশি মুখ খোলেননি।

শেষকৃত্যের দায়িত্ব নিলেন গার্গীর আত্মীয়া

পুলিশ তিনটি দেহের ময়নাতদন্ত শেষে তা হস্তান্তর করে গার্গীর আত্মীয়া সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। তিনি শেষকৃত্যের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গার্গীদি বারবার বলতেন—আয়ুষ্মানকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না। এখন তিনজনকেই একসঙ্গে যেতে হল।”

সমাজের আয়নায় এই মৃত্যু এক বড় প্রশ্নচিহ্ন

একটা সময় মধ্যবিত্ত শহুরে জীবনের প্রতীক ছিলেন স্মরজিৎ-গার্গী। কিন্তু সময়ের সঙ্গে খরচ বেড়েছে, আর্থিক সহায়তা কমেছে। তাঁদের জীবনে কোনও ‘সোশ্যাল সিকিউরিটি নেট’ ছিল না, না সরকারি, না প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের কাছ থেকে। এই মৃত্যু কেবল একটি পরিবারের করুণ পরিণতি নয়, আমাদের সমাজের এক গভীর ব্যর্থতা

আজ রাজডাঙার গলিতে একরাশ নীরবতা। তিনটি প্রাণ নিভে গেল, যাঁদের কেউ জানতে পারেনি ঠিক সময়ে। তাঁদের চিঠি, তাঁদের অনুরোধ, তাঁদের কান্না পৌঁছয়নি কোনও সরকারি কানে। যদি পৌঁছতো—তবে হয়তো শেষ চিঠিতে লেখা থাকত না, “একসঙ্গে দাহ করলে শান্তি পাব।”