এক পশলা বৃষ্টি নয়, দু’দিন ধরে অঝোর ধারা আর ড্যাম ছাড়ার জেরে সিলাবতী নদীর জল বেড়ে এতটাই ভয়াবহ আকার নিয়েছে, যে জুন ২০২৫-এর বন্যাকে ইতিমধ্যেই ‘গরবেতার ১৯৭৮’ বলা হচ্ছে।
জলের নীচে গ্রাম, বিপর্যস্ত গরবেতা ও আশপাশের ব্লক
মেদিনীপুর জেলার গরবেতা ১ ও ২ নম্বর ব্লকের বহু গ্রাম এক ধাক্কায় জলের নীচে চলে যায়। কমপক্ষে ৫০টি গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যায় জলপ্রলয়। বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে গরবেতা ১ ব্লকের ১১টি এবং গরবেতা ২ ব্লকের ৩টি অঞ্চলে প্রবল জল ঢুকে পড়ে। একাধিক কাঁচা বাড়ি, দোকানপাট, কৃষিজমি, সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু কাঁচা বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে, সংখ্যাটা ১০০-র বেশি বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
উদ্ধার ও ত্রাণে নামানো হয়েছিল বিশেষ বাহিনী
পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছিল তিনটি বিশেষ বাহিনী—NDRF, SDRF এবং QRT। উদ্ধারকাজের পাশাপাশি খোলা হয় ত্রাণ শিবির। সেখানে সরবরাহ করা হয় চাল, ডাল, ওআরএস, পানীয় জল, ওষুধ এবং প্রাথমিক চিকিৎসা। স্বাস্থ্য দফতরের টিমগুলি নিয়মিত ত্রাণ শিবিরে যাচ্ছেন, সরবরাহ করছেন সাপে কামড়ানোর অ্যান্টিভেনমও।
একটাই প্রশ্ন: আবার কবে থামবে এই বিপদ?
স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন, এমন দুর্যোগ তাঁরা শেষ দেখেছেন ১৯৭৮ সালে। সেবারও সিলাবতী নদীর রুদ্ররূপ কেড়ে নিয়েছিল ঘরবাড়ি ও ফসল। এ বার সেই স্মৃতি যেন ফিরে এল। পালাশিয়া, পাথরবেড়িয়া, জোগারডাঙ্গা, শরবত সহ একাধিক গ্রাম পুরোপুরি ডুবে যায়।
প্রশাসন ব্যস্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে
গরবেতা ছাড়াও পাশে চন্দ্রকোনা ও ঘাটাল এলাকার কিছু অংশেও জল ঢুকে পড়েছে। ঘাটাল মহকুমার গোপীনদপুর ও রানিচক এলাকার জল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। স্লুইস গেটগুলি শক্ত করা হচ্ছে যাতে নতুন করে আর জল না ঢোকে।
আশার আলো—উঁচু এলাকায় জল নামছে
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে মৈতা ও নেপুরা-র মতো কিছু উঁচু এলাকায় জল নামতে শুরু করেছে। তবে নিচু এলাকা এখনো জলের তলায়। ত্রাণশিবিরে ঠাঁই নেওয়া বহু মানুষ এখনও বাড়ি ফেরার সাহস পাননি।
তবুও চলছে লড়াই—জলপাইগুড়ি থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, একটাই লক্ষ্য: মানুষের পাশে থাকা
গরবেতার এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে প্রশাসনের ভূমিকা ইতিবাচক বলেই জানাচ্ছেন অনেকে। তবে প্রশ্ন উঠছে, আগাম প্রস্তুতি থাকলে কী এই বিপর্যয় কিছুটা হলেও ঠেকানো যেত না?