পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সরকারি ও সরকার-অনুদানপ্রাপ্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবার পড়ুয়াদের সামনে হাজির হচ্ছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই। রাজ্য শিক্ষা দফতরের তরফে নির্দেশ জারি করে বলা হয়েছে, স্কুলগুলির লাইব্রেরিতে মুখ্যমন্ত্রীর ১৯টি রচনা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বইগুলির মধ্যে রয়েছে ‘দুয়ারে সরকার’, ‘শিশুমন’, ‘কথাঞ্জলি’, ‘কাঁচা ছড়া’, ‘আমাদের দুর্গোৎসব’-এর মতো বিষয়বস্তু-সমৃদ্ধ প্রকাশনা।
কী বলছে শিক্ষা দফতর?
২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে রাজ্যের ২০২৬টি স্কুলকে এই বই কেনার জন্য এককালীন ১ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০.২৬ কোটি টাকার প্রকল্পে, রাজ্য জুড়ে মোট ৫১৫টি বইয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ১৯টি বইকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিকাশে এই রচনাগুলি সহায়ক হবে। জানানো হয়েছে, রাজ্যের ১৯টি জেলাকে ৫টি জোনে ভাগ করে বইগুলি দ্রুত পাঠানো হবে। স্কুল-স্তরে গ্রন্থাগারিক ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে বই বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা দেখভাল করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। জেলা স্তর থেকে পুরো বিষয়টির তদারকি করা হবে এবং বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
তীব্র প্রতিক্রিয়া
তবে এই সিদ্ধান্তে অখুশি বহু শিক্ষক সংগঠন ও অভিভাবক মহল। তাঁদের অভিযোগ, এমন পদক্ষেপ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একমাত্রিকতা ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়িয়ে দিচ্ছে। শিক্ষকদের মতে, পাঠ্যবইয়ের বাইরের সাহিত্য নির্বাচনে ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা ও গুণগত মানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত, কোনও বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের লেখার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা উচিত নয়।
প্রশাসনের যুক্তি
জেলার শিক্ষা আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বইগুলিতে সামাজিক বার্তা, শিশু সাহিত্য ও মানবিক মূল্যবোধের প্রসার রয়েছে। সেই দিক থেকে এগুলি ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। স্কুল লাইব্রেরিতে মুখ্যমন্ত্রীর রচনা অন্তর্ভুক্তির এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের শিক্ষা ও প্রশাসনিক মহলে বিতর্ক শুরু হলেও শিক্ষা দফতর আপাতত সিদ্ধান্তে অনড়। বই পাঠানো ও লাইব্রেরিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে বলেই জানানো হয়েছে।