বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষা করতে এবার সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি অভিযোগ করেন, বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্যে ছিল ক্ষোভ, হতাশা এবং স্পষ্ট হুঁশিয়ারি—এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে রাজ্যজুড়ে বড় আকারের আন্দোলনে নামতে তিনি পিছপা হবেন না। রাজ্যের এক সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যেভাবে বাংলা ভাষাকে বারবার উপেক্ষা করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যেন এক অদৃশ্য শত্রুতা চলছে। এটা চলতে দেওয়া যায় না।”
ভাষা নিয়ে কেন এই ক্ষোভ?
পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষাকে বাধ্যতামূলক করায় কেন্দ্রীয় স্তরে নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি কিছু কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় বা নথিপত্রে বাংলার উপস্থিতি সীমিত রাখার অভিযোগও উঠেছে। এই প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কারও নাম উল্লেখ করেননি, কিন্তু তাঁর ইঙ্গিত যে কেন্দ্রের একাংশ এবং কিছু প্রশাসনিক স্তরের প্রতি, তা স্পষ্ট বোঝা গেছে।
বাংলাকে ছোটো করার চেষ্টার প্রতিবাদ
মমতা বলেন, “বাংলা আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। বাংলা ভাষা আমাদের গর্ব। কেউ যদি সেটাকে ছোটো করতে চায়, তাহলে আমরা নিশ্চুপ থাকব না।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা সকল ভাষার সম্মান করি, কিন্তু আমাদের ভাষাকে অবজ্ঞা করলে তা রুখে দাঁড়াতে জানি।” তিনি এও জানান, বাংলা ভাষা নিয়ে কোনও আপস করা হবে না। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই শিক্ষাক্ষেত্রে ও প্রশাসনে বাংলা ব্যবহারের গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। ভবিষ্যতেও সেই চেষ্টায় ঘাটতি থাকবে না বলে জানান তিনি।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল মুখ্যমন্ত্রীর আন্দোলনের ইঙ্গিত। তিনি বলেন, “আমি আর চুপ করে থাকব না। প্রয়োজনে রাজ্যের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বড় আন্দোলনে নামব। বাংলা ভাষার অপমান সহ্য করব না।” রাজনৈতিক মহলে এই মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই আলোড়ন শুরু হয়েছে। একাংশের মতে, কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপড়েনের মাঝে এবার ‘ভাষা রাজনীতি’ নতুন মাত্রা পেল।
বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, মমতার বক্তব্য রাজনৈতিক হলেও এর ভিতরে একটি গভীর সমাজ-সাংস্কৃতিক প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। বাংলায় বসবাস করেও কেউ যদি অন্য ভাষাকে অগ্রাধিকার দেন, কিংবা প্রশাসনিক স্তরে বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব না দেওয়া হয়, তবে তার প্রতিক্রিয়া হতেই পারে। তবে বিরোধীদের মতে, এ সবই আসন্ন নির্বাচনের আগে আবেগময় ইস্যু তৈরি করার কৌশল। তবে যাই হোক, মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের ভাষণে ‘বাংলা ভাষা’ নিয়ে যে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে, তা মানছেন অনেকেই।