বিয়ের সাজ এখন আতঙ্কের প্রতীক! উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত মহকুমায় একের পর এক নববধূ শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন। পুলিশের নথি বলছে, গত কয়েক বছরে ৫০০-র বেশি এমন ঘটনা সামনে এসেছে। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে মানসিক ও শারীরিক নিগ্রহ, তুচ্ছ অজুহাতে হেনস্থা, এমনকি গার্হস্থ্য হিংসা।
বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই গায়েব
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশিরভাগ ঘটনাতেই বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই নববধূরা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। কোথাও ৭ দিন, কোথাও আবার মাস ঘুরতে না ঘুরতেই গৃহত্যাগের সিদ্ধান্ত। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা প্রথমে লজ্জা ও লোকলজ্জার ভয়ে চুপ থাকলেও, পরবর্তীতে বহু পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। নববধূদের অভিযোগ অনুযায়ী, বিয়ের পর থেকেই তাঁদের উপর অত্যাচার শুরু হয়। কারও বিরুদ্ধে খাওয়াদাওয়া নিয়ে খুঁতখুঁতানি, কারও বিরুদ্ধে যৌতুক চাওয়া, আবার কোথাও শ্বশুর-শাশুড়ির অবমাননাকর ব্যবহার। এমনকি শারীরিক নির্যাতনের কথাও উঠে এসেছে একাধিক মামলায়।
উদ্বিগ্ন প্রশাসন ও সমাজকর্মীরা
এই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সমাজকর্মী ও স্থানীয় নেতৃত্বরা। তাঁদের মতে, সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়, সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধার অভাব, এবং আইনি সচেতনতার ঘাটতি—এই তিনটি বিষয়ই ঘটনার মূল কারণ। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা অভিযান চালানো হবে। পাশাপাশি, নতুন দম্পতিদের জন্য কাউন্সেলিং এবং বৈবাহিক সহায়তা পরিষেবা শুরু করার ভাবনা চলছে। বারাসত মহকুমা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, কোনও অভিযোগ পেলেই তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিক সালিশের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। তবে, যেখানে আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন, সেখানে FIR দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি
সমাজবিদদের মতে, শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নয়, প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বদল। বিয়ে মানেই কেবল নারীর দায়িত্ব নয়—এই উপলব্ধি সমাজে আনতে হবে। পাশাপাশি, পরিবারগুলির মধ্যে সংলাপ এবং সহনশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত বিশ্লেষকদের।