DA News : বকেয়া ডিএ ইস্যুতে দীর্ঘ টালবাহানার পর শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে চাপে পড়েছে রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, রাজ্যকে তার মোট ডিএ বকেয়ার ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ₹১০,৪৪৩ কোটি, তিন মাসের মধ্যে জমা করতে হবে। এই নির্দেশ জারি হওয়ার পরই অর্থ সংগ্রহে তৎপর হয়েছে রাজ্য প্রশাসন। জানা গিয়েছে, প্রথম ধাপে টাকা শোধে প্রায় ₹৪,৩০০ কোটি বাজার থেকে ধার নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
শীর্ষ আদালতের কড়া বার্তা
গত ১৬ মে দেশের সর্বোচ্চ আদালত রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়, অবিলম্বে বকেয়া ডিএর অন্তত ২৫ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। মোট বকেয়ার অঙ্ক দাঁড়াচ্ছে ₹৪১,৭৭০.৯৫ কোটি, যা রাজ্যের হাজার হাজার কর্মী, পেনশনভোগী ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কর্মীদের পাওনা হিসেবে গণ্য। নির্দেশ কার্যকর করার জন্য তিন মাস সময় দিয়েছে আদালত। তার পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত রয়েছে আগস্ট মাসে।
কাদের পাওনা কত?
এই বকেয়া ডিএ মূলত ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালের জন্য বকেয়া হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় কর্মীদের তুলনায় ৩৭ শতাংশ কম ডিএ পাচ্ছেন। বর্তমানে রাজ্যে ডিএ দেওয়া হচ্ছে ১৮ শতাংশ হারে, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার কর্মীদের দেওয়া হচ্ছে ৫৫ শতাংশ। এই ব্যবধান নিয়ে বহুদিন ধরেই ক্ষোভ ছিল রাজ্য সরকারি মহলে।
ধার করে পরিশোধের উদ্যোগ
আদালতের নির্দেশ মানতে রাজ্য সরকার প্রাথমিকভাবে বাজার থেকে ₹৪,৩০০ কোটি ধার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এই টাকা ২৭ জুনের মধ্যে খরচ করে প্রথম দফায় বকেয়া শোধের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা যাচ্ছে। তবে এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের আর্থিক ভারসাম্যকে আরও টলিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে রাজ্যের মোট ঋণের পরিমাণ ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে ₹৭.০৬ লক্ষ কোটিতে।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই নির্দেশ?
ডিএ শুধু একটি ভাতাই নয়, এটি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রায় এক দশক ধরে কেন্দ্রের থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পিছিয়ে থাকার কারণে রাজ্য সরকারি কর্মীরা বারবার বিক্ষোভ দেখিয়ে এসেছেন। এই নির্দেশ সেই ক্ষোভ নিরসনে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে আদালতের স্পষ্ট বার্তা, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া না মেটালে আদালত অবমাননার মামলা হতে পারে।
আগামী পদক্ষেপ কী?
বর্তমানে রাজ্য প্রশাসন অর্থ সংগ্রহ এবং হিসাবনিকাশের কাজ শুরু করেছে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই বকেয়া শোধের প্রথম ধাপ কার্যকর হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে প্রশাসনের অন্দর থেকে। তবে মূল প্রশ্ন হল, পরবর্তী ৭৫ শতাংশ বকেয়া কবে মেটানো হবে এবং তার আর্থিক বোঝা কীভাবে সামলাবে রাজ্য। রাজ্যের আর্থিক অবস্থা চাপের মধ্যে থাকলেও, আদালতের নির্দেশ অমান্য করা সম্ভব নয়। তাই পরবর্তী কয়েক মাস রাজ্য সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। এই পর্বের সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে প্রশাসনের পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতার ওপর।