Kolkata Metro : একটা ব্রেক কষা, আর তাতেই সাশ্রয় কোটি কোটি টাকা! শুনে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। কলকাতা মেট্রো রেলের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার যে কতটা কার্যকর হতে পারে, তার প্রমাণ মিলছে সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যেই।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অভিনব কৌশল
কলকাতা মেট্রো এখন ‘রিজেনারেটিভ ব্রেকিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ৩৭টি রেকে। এই পদ্ধতিতে যখন ট্রেন থামে, তখন যে কাইনেটিক এনার্জি (গতিশক্তি) সৃষ্টি হয়, সেটিকে বিদ্যুতে রূপান্তর করে কাজে লাগানো হচ্ছে। ফলে প্রতিটি ব্রেক চাপাই এক অর্থে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগে পরিণত হয়েছে। ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রায় ১.০৮ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ₹৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ কেনার খরচ এই পরিমাণ কমানো সম্ভব হয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে।
পরিবেশে মিলছে ইতিবাচক প্রভাব
শুধু আর্থিক দিক নয়, পরিবেশগত দিক থেকেও এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পুনরুজ্জীবিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে ১৩,৫০০ টনেরও বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। পরিবেশবিদদের মতে, শহরের পরিবেশ দূষণ রোধে এ এক বড় পদক্ষেপ।
কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে এই বিদ্যুৎ?
এই উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে ট্রেন চালানো, স্টেশনের এসি ইউনিট চালু রাখা এবং আলোকসজ্জার মতো কাজে। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটিই হয়ে উঠছে আরও পরিবেশবান্ধব ও স্বনির্ভর। ট্রেন চালানোর খরচ কমানোর পাশাপাশি যাত্রী পরিষেবাতেও উন্নতি দেখা যাচ্ছে।
শুধু বর্তমান নয়, নজর ভবিষ্যতের দিকেও
এখানেই থেমে থাকছে না কলকাতা মেট্রো। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সংরক্ষণের ক্ষমতা আরও বাড়াতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন Advanced Chemical Cell (ACC) ব্যাটারি স্টোরেজ সিস্টেম চালুর। রাজ্যে এই প্রথমবার এমন আধুনিক ব্যাটারি ব্যবস্থার প্রয়োগ হবে। চলতি বছরের মধ্য জুলাই থেকেই এটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
এই প্রযুক্তির সাহায্যে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ তৈরি নয়, সংরক্ষিত বিদ্যুৎ পরে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহারের সুযোগও মিলবে। ফলে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ এবং খরচ বাঁচানো—দুই দিকেই বড় সাফল্য আশা করা হচ্ছে। কলকাতা মেট্রো রেল শুধু যাত্রী পরিবহনের মাধ্যম নয়, এবার হয়ে উঠছে দেশের অন্যতম পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন মডেলও। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যেমন অর্থ বাঁচানো যাচ্ছে, তেমনি শহরের পরিবেশেও পড়ছে ইতিবাচক প্রভাব। রিজেনারেটিভ ব্রেকিং-এর এই সাফল্য ভবিষ্যতের অন্যান্য রেল প্রকল্পেও পথ দেখাতে পারে।