TRENDS
হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে গেল ল্যাপটপ? কী করবেন এখনই জেনে নিন
সাধ্যের মধ্যে সাশ্রয়ী বাইক খুজছেন! রইল ১ লাখের কমে সেরা কিছু সন্ধান

দিঘা বনাম পুরী রথযাত্রা: ‘জগন্নাথ ধাম’ নাম নিয়ে রাজনীতি ও বিতর্ক

দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দির ও আসন্ন রথযাত্রা ঘিরে উঠেছে বিতর্ক। ‘জগন্নাথ ধাম’ নাম নিয়ে ওড়িশার আপত্তি, পুরীর সেবায়েতের শাস্তি, আর রাজনৈতিক চাপানউতোরে ঘোলা জল ধর্মীয় আবেগেও।

Debapriya Nandi Sarkar

ধর্মীয় উৎসবের আবরণে রাজ্য-রাজনীতির উত্তাপ ছড়াল এবার সমুদ্র শহরেও। পুরীর রথযাত্রার ঐতিহ্য ছাপিয়ে দিঘার ‘নতুন’ জগন্নাথ ধামকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিভাজন, বিতর্ক এবং বিতর্কের জেরেই বহুল আলোচিত এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে জারি হল কড়া নিরাপত্তা। পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় সম্প্রতি উদ্বোধন হয়েছে এক বিশাল জগন্নাথ মন্দির, যা মূলত পুরীর আদলে নির্মিত। প্রায় ২০ একর জমির উপর তৈরি এই প্রকল্পের জন্য খরচ হয়েছে আনুমানিক ₹২০০ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল এই মন্দিরের উদ্বোধন হয়। ২৭ জুন নির্ধারিত হয়েছে মন্দিরের প্রথম রথযাত্রা—যা ঘিরে তৈরি হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত প্রত্যাশা ও তুমুল রাজনৈতিক-বৌদ্ধিক বিতর্ক।

Advertisements
Whatsapp-color Created with Sketch. গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে এখনই যুক্ত হোন 👉🏻
Join Now

পাথরের মূর্তি, কাঠ নয়—তাতেই প্রথম আপত্তি

পুরীর রথযাত্রায় শতাব্দীপ্রাচীন নিয়ম অনুযায়ী কাঠের দারু (পবিত্র কাঠ) দিয়ে নির্মিত হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি। দিঘার মন্দিরে এই নিয়ম মানা হয়নি। সেখানে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে পাথরের মূর্তি, যা নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে বিশেষত পুরীর শেবায়েত মহলে। অনেকে দাবি করছেন, পুরীর অতিরিক্ত দারু দিঘায় পাঠানো হয়েছে, যদিও তা সরকারি ভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।

‘জগন্নাথ ধাম’ নাম ঘিরেই বাড়ছে রাজনৈতিক চাপানউতোর

দিঘার মন্দিরের নাম রাখা হয়েছে ‘জগন্নাথ ধাম’। কিন্তু এই বিশেষ উপাধি ঐতিহ্যগতভাবে শুধুমাত্র পুরীর সঙ্গেই জড়িত। ওড়িশার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মহল এই নামকরণে আপত্তি জানিয়ে বলেছে, এটা বাংলার ‘সাংস্কৃতিক দখলদারি’। প্রবাসী ওড়িয়া সম্প্রদায়ও এই ইস্যুতে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানায়। এই নাম ঘিরে সোচ্চার হয়েছেন কেন্দ্রীয় রাজনীতিকরাও। একদিকে ওড়িশা সরকার সরাসরি পশ্চিমবঙ্গকে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে, অন্যদিকে, শঙ্করাচার্যরাও মন্তব্য করেছেন, ‘এই পদক্ষেপ শুধুই অর্থনৈতিক লাভের আশায়।’

Whatsapp-color Created with Sketch. সেরা খবরগুলো মোবাইলে পেতে এখনই যুক্ত হোন👉🏻
Join Now

পুরী শেবায়েতের উপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

পুরীর এক প্রবীণ সেবায়েত রামকৃষ্ণ দাসমোহপাত্র দিঘার মন্দিরে গিয়ে পুজো করেছিলেন এবং মন্তব্য করেন যে মূর্তিগুলিতে পুরীর দারু ব্যবহৃত হয়েছে। এর জেরেই পুরীর মন্দির প্রশাসন তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। এছাড়া, আরও দুই শেবায়েত সংগঠন জানিয়ে দেয়, তাদের কোনও সদস্য দিঘার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না।

রথযাত্রা আয়োজন: ভিড়, সুরক্ষা ও পরিবহন নিষেধাজ্ঞা

২৭ জুনের রথযাত্রায় প্রায় ২ লক্ষ দর্শনার্থীর সমাগম হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দিঘা মন্দির প্রাঙ্গণ একসঙ্গে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মানুষ ধারণে সক্ষম। অতিরিক্ত জনসমাগম সামাল দিতে কঠোর নিরাপত্তা ও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। শুধুমাত্র দড়ি টেনে রথ টানা যাবে, স্বেচ্ছাসেবকরাই রথ টানার দায়িত্বে থাকবেন। যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হচ্ছে।

ধর্মীয় আবেগ না কি রাজনৈতিক ইঙ্গিত?

এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে মন্দির-ভিত্তিক ধর্মীয় পর্যটনের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হলেও, ওড়িশা ও বহু হিন্দু সংগঠনের মতে, এটি মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একাধিক মহল মনে করছে, রাজ্য সরকার এই উদ্যোগে ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক তৈরি করতে চাইছে, যার মাধ্যমে রাজ্যের পরিচয় ও প্র ভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে।দিঘার রথযাত্রা আপাতদৃষ্টিতে এক নতুন ধর্মীয় উৎসব হলেও, তার পেছনে জমে উঠেছে বহুস্তরীয় বিতর্ক—সংস্কৃতি, ধর্ম এবং রাজনীতির সংঘাত। এবার দেখার, কতটা সফল হয় এই উদ্যোগ এবং কতদূর প্রশমিত হয় পুরীর রোষ।