Odisha-Bengal clash : রথযাত্রা উপলক্ষে তটবর্তী পর্যটন শহর দিঘা এখন সাজো সাজো রব। এই প্রথমবারের মতো দিঘা witnessing করছে মহা রথযাত্রা, আর সেই উপলক্ষে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং পৌঁছে যান রথের পথ পরিদর্শনে। প্রস্তুতি খতিয়ে দেখা থেকে শুরু করে নিরাপত্তার পরিকল্পনা—সব কিছুর মধ্যেই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধান। তবে এই ধর্মীয় আয়োজনে ভক্তির পাশাপাশি যোগ হয়েছে রাজনৈতিক উত্তাপও।
নতুন রথ, নতুন ইতিহাস
মাত্র কয়েক মাস আগেই, এপ্রিল মাসে উদ্বোধন হয়েছে দিঘার জগন্নাথ ধাম মন্দির। রাজ্য সরকারের অর্থায়নে তৈরি হয়েছে বিশাল এই ধর্মস্থল, প্রায় ২০০ কোটি টাকার ব্যয়ে। কেল্লা-সদৃশ কাঠামোয়, কলিঙ্গ স্থাপত্যে নির্মিত মন্দিরটি ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর নজর কেড়েছে। উদ্বোধনের পর মাত্র দু’মাসেই ভিড় জমিয়েছেন প্রায় ৩০ লক্ষ ভক্ত।
রথযাত্রার রুট ম্যাপ খতিয়ে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী
রথযাত্রা হবে মাত্র এক কিলোমিটার পথে, কিন্তু ভিড় হতে পারে আড়াই লক্ষ মানুষের। সেই অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে নির্দেশ দেন—নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা যাতে কোনওভাবেই বিঘ্নিত না হয়। পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, আইএসকন, ডিসিডিএ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “নিরাপত্তা সর্বাগ্রে।” বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকরাই কেবল রথ টানতে পারবেন। রাস্তাজুড়ে থাকবে ব্যারিকেড, পথ নিয়ন্ত্রণ করা হবে এক দিন আগেই। পর্যটকদের ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি স্থানীয় টোটো ও বাস পরিষেবাতেও থাকছে বিধিনিষেধ।
ওড়িশা-বাংলা টানাপোড়েন
দিঘার মন্দিরকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছে ওড়িশা ও বাংলার সম্পর্ক। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সঙ্গে তুলনা টেনে ওড়িশা সরকার আপত্তি জানালে, মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “আমরা কারও প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চাই না, ভক্তির সঙ্গে সব নিয়ম পালন করে মন্দির গড়া হয়েছে।” এছাড়াও, মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, ওড়িশার কটক ও বালেশ্বরে একাধিক বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিককে হয়রানি ও আটক করা হয়েছে। প্রশ্ন তোলেন, “এ দেশে কি বাংলা বলা অপরাধ?”
ভোটের আগে রথেও রাজনীতি?
রথযাত্রা যেমন ভক্তির কেন্দ্রবিন্দু, তেমনই এই সময়কেই রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছে রাজ্য সরকার। বিশেষ করে বাংলার সংস্কৃতি ও ভাষার প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান একাধিক রাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, তত স্পষ্ট হচ্ছে ধর্মীয় আবেগ ও আঞ্চলিক গর্বের মিশ্রণ। রথযাত্রার দিন শুধু রথ নয়, রাস্তায় নামবে রাজ্য সরকারের মর্যাদাও। নিরাপত্তা ও জনসমাগমের কঠিন পরীক্ষার পাশাপাশি এই উৎসব ঘিরে তৈরি হয়েছে এক রাজনৈতিক মঞ্চ, যেখানে ভক্তি ও বার্তা, উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ।