রাজ্যের বুকে ফের নারকীয় ঘটনা! কসবা এল কলেজে ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে জোরালো রাজনৈতিক চাপানউতোর। ঘটনার মূল অভিযুক্ত কলেজের প্রাক্তনী মনোজিৎ মিশ্র। সঙ্গে ধৃত জাইব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায়। ঘটনায় যেখানে বিরোধীরা একযোগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন, সেখানে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ প্রকাশ্যে ‘চামড়া গুটিয়ে দেওয়ার’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ঘটনাক্রমে বিস্ফোরণ
অভিযোগ, ২৫ জুন বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে প্রায় পৌনে নয়টা পর্যন্ত কলেজের গার্ডরুমে ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। ছাত্রীর দাবি, প্রথমে ইউনিয়ন রুমের পাশের টয়লেটে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করা হয়, পরে পাশের ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে চলে নৃশংস অত্যাচার। জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থলেই ছিলেন মনোজিৎ। কলেজের অস্থায়ী স্টাফ হিসেবেই তিনি সেখানে ঘোরাফেরা করতেন। পরে দুই পড়ুয়াকেও জড়ানো হয় কাণ্ডে। পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত শুরু করে। রাতেই দুই অভিযুক্তকে কসবার তালবাগান ক্রসিং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে মনোজিৎকেও বাড়ি থেকে ধরে আনা হয়। অভিযুক্তদের মোবাইল, ভিডিও ফুটেজ সহ একাধিক প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। আদালত তাদের ১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
বিরোধীদের চড়া সুর
এই ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর আর চেয়ার দখলে রাখার কোনও নৈতিক অধিকার নেই। গোটা পুলিশ ফোর্স তো দিঘায় ঘুরছে! কসবার মেয়েটি কী পাপ করেছিল?” তিনি দাবি করেন, “এটা ছোট ঘটনা, লাভ অ্যাফেয়ার, কিংবা গর্ভবতী—এমন অজুহাত দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। শেষমেশ হয়তো বলবেন ১০ লাখ দিয়ে মিটিয়ে দিন!”
তৃণমূলের পাল্টা বারুদের ঝাঁঝ
বিষয়টিতে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “এই জানোয়ারদের পিঠের চামড়া গুটিয়ে দেওয়া উচিত। পুলিশের উচিত সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। বিরোধীরা নৈতিকতাহীন, ওরা নিজের রাজ্যেও নারী নির্যাতনের রেকর্ডধারী। কিন্তু আমরাও কঠোর, দলের কোনও ছেলে যদি এমন কিছু করে, তার জায়গা জেলেই।” কুণালের এই মন্তব্যে বিরোধী মহলে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “যদি কসবার ধর্ষণ নিয়ে মুখ খুলতে গিয়ে একজন রাজনীতিক এমন ভাষা ব্যবহার করেন, তাহলে এটা প্রমাণ করে সরকার কতটা দিশাহীন।”
নারী সুরক্ষার প্রশ্নে ফের উত্তাল বাংলার রাজনীতি
২০২৪ সালের আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার ক্ষত এখনও শুকায়নি। তার মাঝেই কসবার এই ঘটনা নতুন করে নারী সুরক্ষার বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে। কলেজের মধ্যে গার্ডরুমে এমন ভয়াবহ অপরাধ রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। ফরেন্সিক দল ইতিমধ্যেই কলেজে গিয়েছে প্রমাণ সংগ্রহে। নির্যাতিতার শারীরিক পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে যে রাজ্যের রাজনীতি আগামী দিনে আরও উত্তপ্ত হবে, তা বলাই যায়।