শহরের এক গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগপথ দুর্গাপুর ব্রিজ ৫২ ঘণ্টার জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (KMDA)। শনিবার (২৮ জুন) দুপুর ২টো থেকে শুরু করে সোমবার (৩০ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনওরকম যান চলাচল হবে না এই ব্রিজে। কারণ, সেতুর ভারবহন ক্ষমতা বা লোড টেস্ট চালাতে চাইছে কর্তৃপক্ষ।
বিকল্প রুট ঘোষণা করল ট্রাফিক পুলিশ
দক্ষিণ কলকাতা এবং নিউ আলিপুর–চেতলার সংযোগকারী এই সেতু বন্ধ থাকায় ওই অঞ্চলে প্রবল যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। তবে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, উত্তরমুখী যানবাহনগুলিকে নিউ আলিপুর ট্র্যাফিক আইল্যান্ড থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। দক্ষিণমুখী গাড়িগুলিকে আলিপুর রোড ও গোবিন্দ আঢ্য রোডের সংযোগস্থল থেকে ঘোরাতে হবে। যদিও মাঝেরহাট সেতু দিয়ে যান চলবে, ধনধান্য এবং জিরাট সেতু এই সময়ের মধ্যে বন্ধই থাকবে। ফলে চূড়ান্ত চাপে পড়বে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড ও অন্যান্য বিকল্প পথ। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের জন্য এই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।
বেহালাবাসীর দুঃস্বপ্ন হতে পারে ৫২ ঘণ্টা
বেহালার দিক থেকে শহরে ঢোকার অন্যতম প্রধান বিকল্প ছিল দুর্গাপুর ব্রিজ। সেটি বন্ধ থাকায় সেই এলাকার বাসিন্দাদের তীব্র দুর্ভোগের আশঙ্কা। যাত্রী পরিবহণ থেকে জরুরি পরিষেবা—সবই চাপে পড়বে বলে মনে করছে প্রশাসন।
কেন এই লোড টেস্ট জরুরি?
গত বছর ডিসেম্বরে দুর্গাপুর ব্রিজের নিচে অবস্থিত বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই আগুনে তীব্র তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুর নীচের কংক্রিট স্ট্রাকচার। পরবর্তী স্বাস্থ্য রিপোর্টে উঠে আসে, আগুনে কংক্রিটের আর্দ্রতা শুকিয়ে গিয়ে সেতুটি প্রায় ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। তারপর থেকেই ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এখন সেই সেতুর স্ট্রাকচারাল শক্তি কতটা টিকে আছে, তা জানতেই এই লোড টেস্ট চালানোর সিদ্ধান্ত। এর ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যতে সেতু সংস্কার না ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত।
একটা সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কিন্তু শহরজুড়ে তার প্রভাব
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠছে, শহরের অন্যান্য পুরনো সেতুগুলোর স্বাস্থ্য কেমন? আগুন বা অতিরিক্ত চাপের কারণে হঠাৎ করে যদি কোনও সেতু ধসে পড়ে, তার আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি কি রয়েছে প্রশাসনের? দুর্গাপুর ব্রিজ নিয়ে সতর্কতা ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও, বাকিগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়মিত টেস্ট কতটা হচ্ছে, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।