সোমবার নবান্ন থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, বাংলার বাড়ি প্রকল্পের আওতায় যারা এখনও প্রথম কিস্তির টাকা পাননি, সেই ১৬ লক্ষ উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই টাকা পাঠানো হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের নিজস্ব ঘর তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলার ঘরে কেউ আর গৃহহীন থাকবে না। আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা পূরণ করব।”
বাড়তি বরাদ্দ ৯৬০০ কোটি টাকা, নতুন গতি প্রকল্পে
এই প্রকল্পে চলতি আর্থিক বছরে আরও ৯৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রে খবর, বাজেট পুনর্বিন্যাস করে এই টাকা ছাড় করা হবে। বলা হচ্ছে, এই বরাদ্দের ফলে শুধু যে নির্মাণ কাজ গতি পাবে তাই নয়, বরং পঞ্চায়েত স্তর থেকে ব্লক অফিস পর্যন্ত প্রশাসনিক কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পাবে।
কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’-র বিকল্প এই উদ্যোগ?
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (PMAY)-এর মতই বাংলার বাড়ি প্রকল্প। তবে কেন্দ্রীয় অনুদান না পাওয়ার অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্র সরকার টাকা না দিলে আমরা বসে থাকব না। রাজ্য সরকার নিজের টাকায় ঘর বানিয়ে দেবে। বাংলা নিজের পথ নিজেই খুঁজে নেবে।”
নির্বাচনের আগে ‘গৃহনীতি’তে জোর তৃণমূলের?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ঘোষণা তৃণমূলের পক্ষ থেকে বড় চমক। সাধারণ মানুষের আবাসন সমস্যাকে হাতিয়ার করে সরকারের জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা এটা। একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে, “যে রাজনীতিতে রেশন, টাকা ও ঘর এখন ভোট নির্ধারক, সেখানে ১৬ লক্ষ মানুষের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকা একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা। বিশেষত বিরোধীদের সক্রিয় সমালোচনার মুখে এই পদক্ষেপ তৃণমূলকে রক্ষাকবচ দেবে।”
প্রকল্পে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন, কড়া নজরদারির বার্তা
যদিও প্রকল্প ঘিরে অভিযোগও রয়েছে। কিছু এলাকায় উপভোক্তার নাম বাছাই নিয়ে অস্বচ্ছতা, ঘর তৈরি নিয়ে অনিয়ম ইত্যাদির অভিযোগ উঠেছে।নমুখ্যমন্ত্রী এদিন কড়া বার্তা দেন, “একটা টাকাও যেন লুঠ না হয়। প্রকল্পের টাকা যাতে সঠিক মানুষ পায়, তার জন্য ব্লক স্তরে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে। কোনো তৃণমূল কর্মী বা পঞ্চায়েত সদস্য যদি দুর্নীতি করেন, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপভোক্তাদের মুখে হাসি, কাজের গতি চায় প্রশাসন
এমন ঘোষণা শুনে খুশি বহু উপভোক্তা। হুগলির এক বাসিন্দা বলেন, “দুই বছর ধরে শুধু আশ্বাস শুনছিলাম, আজ মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে সরাসরি শুনে খুবই ভালো লাগছে।” পাশাপাশি পঞ্চায়েত আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কিস্তির টাকা সময়মতো পৌঁছে দেওয়া এবং নির্মাণকাজের মান বজায় রাখা—এই দুই বিষয়ে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে।
বাংলার বাড়ি প্রকল্প যে তৃণমূল সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার, তা ফের একবার স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থনৈতিক দিক থেকে রাজ্যের ওপর চাপ বাড়লেও, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই প্রয়াস রাজনীতির ময়দানে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।
View on Threads