দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরেও বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (DA) ইস্যুতে রাজ্য সরকার এখনও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালনে ব্যর্থ। এরই মাঝে নতুন করে আদালতে ‘মডিফিকেশন’ আবেদন করে ফের সময় চেয়েছে রাজ্য। এই আবেদনের মাধ্যমে রাজ্য চাইছে, সুপ্রিম কোর্ট তাদের আগের রায়টি পুনর্বিবেচনা করুক এবং DA দেওয়ার সময়সীমা আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেওয়া হোক।
SAT রায় ও নতুন প্রশ্ন
এই মডিফিকেশন আবেদনের ভিত্তিকে বেশ দুর্বল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ২০১৭ সালেই স্যাট (SAT) রাজ্যকে ডিএ প্রদানের নিয়মাবলী তৈরির জন্য তিন মাস সময় দিয়েছিল। অথচ এত বছর পর ফের সময় চাওয়ার যুক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বহু মহল। একই কারণে এবার আদালতে দাঁড়িয়ে ফের সময় চাওয়া কি আদৌ যৌক্তিক?
আদালত অবমাননার ইঙ্গিত
১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ’র অন্তত ২৫% পরিশোধ করতে হবে ৬ সপ্তাহের মধ্যে, অর্থাৎ ২৭ জুনের মধ্যে। কিন্তু সেই সময়সীমার মধ্যে রাজ্য কোনও অর্থ মেটায়নি। এই অবস্থায় আদালত অবমাননার সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে। এরই মধ্যে মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিবকে কনটেম্প্ট নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সরকারি কর্মীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম স্পষ্ট জানিয়েছেন, “আবেদন করলেই যে আদালত সেটি গ্রহণ করবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করেনি, এটাই আদালত অবমাননা।”
প্রশ্ন উঠছে আর্থিক অজুহাত নিয়েও
১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট শুনানিতে জানিয়েছিল, সমস্ত পক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে লিখিত ভাবে তাঁদের বক্তব্য পেশ করতে হবে। অর্থাৎ ১২ জুনের মধ্যে রাজ্যের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক অসুবিধার কারণ জানানো উচিত ছিল। কিন্তু সেই সময়সীমার মধ্যেও রাজ্য কোনও লিখিত যুক্তি পেশ করেনি, যা আবারও তাদের অবস্থানকে দুর্বল করে তুলেছে।
আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়ছে রাজ্যজুড়ে
এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও তীব্র হচ্ছে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ এবং রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কর্মচারীরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন—রাজ্য যদি মডিফিকেশন আবেদনের আড়ালে বকেয়া DA না দেয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে তাঁরা।
রাজ্যের এই মডিফিকেশন আবেদন এখন সুপ্রিম কোর্ট কীভাবে গ্রহণ করে, তার দিকেই নজর গোটা রাজ্যের। তবে যেভাবে একের পর এক আইনি দিক থেকে দুর্বল যুক্তি এবং সময়সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে, তাতে রাজ্য সরকারের অবস্থান আরও জটিল হতে চলেছে বলেই মনে করছে প্রশাসনিক মহল।