রাজ্যে আবারও নাবালিকা হেনস্থার ভয়াবহ ঘটনা। কসবা ল’ কলেজের গণধর্ষণ কাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই, রবিবার দুপুরে বারাসাতে (Barasat) প্রকাশ্যে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল। জানা যাচ্ছে, রবিবার দুপুরে বারাসাতের ১২ নম্বর রেলগেটের কাছে নিজের টিউশন থেকে বাড়ি ফিরছিল বছর ১৪-১৫-র এক স্কুলছাত্রী। অভিযোগ, ঠিক সেই সময় একটি যুবক তার পথ আটকে দাঁড়িয়ে যায় এবং আচমকাই তার গোপনাঙ্গে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে।
কান্নার শব্দে ছুটে এলেন দোকানদাররা, রেহাই পেল না অভিযুক্ত
ছাত্রীটি এমন আচমকা হামলায় চমকে উঠে ঘটনাস্থলেই কেঁদে ফেলে। তার কান্নার আওয়াজ শুনেই নিকটবর্তী দোকানদার ও স্থানীয়রা ছুটে আসেন। তাঁরা দ্রুত বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করে এবং দেখে, ওই যুবক এলাকা ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। তবে স্থানীয়দের তৎপরতায় সে পালাতে পারেনি। জনতা রীতিমতো ধরে ফেলে তাকে। এরপর উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তকে রাস্তাতেই গণধোলাই দেয় এবং খবর দেওয়া হয় বারাসাত থানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বারাসাত থানার পুলিশ। অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায় তারা। আপাতত তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে। মেয়েটির পরিবারের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডের আবহেই বারাসাতে নতুন আতঙ্ক
গত সপ্তাহেই কলকাতার কসবা এলাকার এক ল’ কলেজে আইন পড়ুয়া ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসে। সেই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে প্রবল তোলপাড় শুরু হয়েছে। এখনও সেই ক্ষত শুকোয়নি রাজ্যের। এরই মধ্যে বারাসাতের মতো জনবহুল এলাকায়, দিনে-দুপুরে এভাবে এক নাবালিকাকে হেনস্থার চেষ্টা — ফের একবার রাজ্যে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: তোপ দাগল বিরোধীরা
ঘটনার খবর সামনে আসতেই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিরোধী দল বিজেপির দাবি, “রাজ্যে আইনের শাসন নেই। মেয়েরা দিনে রাস্তায় চলতেও নিরাপদ নয়। সরকার কেবল কসবা কাণ্ডে মুখ ঢাকার চেষ্টা করছে, অথচ বারাসাতের মতো জায়গায় নতুন নতুন ঘটনা ঘটেই চলেছে।” অন্যদিকে, তৃণমূল শিবির থেকে এখনো পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছে এবং জেলা পুলিশকে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনতার মধ্যে ক্ষোভ, প্রশাসনের ওপর আস্থা কমছে
বারাসাতের স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, রেলগেট সংলগ্ন এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই অপরাধপ্রবণ। মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের উদাসীনতা তাদের বারবার হতাশ করেছে। বারাসাত থানায় বহুবার অভিযোগ জানানো হলেও সুরাহা মেলেনি বলেই দাবি।
দিনে দিনে বাড়ছে ভয়, কোথায় নিরাপত্তা?
কসবা থেকে বারাসাত — যেন একের পর এক ঘটনায় নারীর প্রতি হিংসা রাজ্যকে ঘিরে ফেলছে। প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। বারাসাত কাণ্ডের পর আরও একবার প্রমাণ হল, শুধু বক্তৃতা নয়, নারীদের জন্য বাস্তবিক নিরাপত্তা প্রয়োজন। তার আগে, হয়তো আর কোনও কিশোরীর চোখে জল পড়বে না — এমনটা বলা যাচ্ছে না।