প্রেমের টানে দেখা করতে এসে যে এমন পরিণতি হবে, তা হয়তো কল্পনাও করেননি বক্সিরহাটের ওই যুবক। প্রকাশ্য দিবালোকে কোচবিহার বাস স্ট্যান্ডে প্রেমিকার পরিবারের হাতে বেদম মারধরের শিকার হতে হল তাকে। পাচারকারী সন্দেহে পরিবারের এই রুদ্রমূর্তি ধারণের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।
ঘটনার সূত্রপাত দিনকয়েক আগে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বক্সিরহাটের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে বামনহাটের এক গৃহবধূর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই গৃহবধূ দুই সন্তানের মা। প্রায় সপ্তাহখানেক আগে বাসে যাতায়াতের সময় তাদের পরিচয় হয় এবং মোবাইল নম্বর বিনিময় হয়। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। অভিযোগ, এই অল্প সময়ের মধ্যেই তারা ফালাকাটার একটি হোটেলে কয়েক রাত একান্তে কাটান।
বিষয়টি নজরে আসে ওই গৃহবধূর পরিবারের। বিশেষত, তার হবু ননদ বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠেন। গৃহবধূর ক্রমাগত ফোনে কথা বলা তাদের সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এরপরই পরিবারের সদস্যরা ওই গৃহবধূর ফোন কেড়ে নেন এবং তার উপর নজরদারি শুরু করেন।
কিন্তু গল্পের এখানেই শেষ নয়। পরিবারের সন্দেহ ছিল, ওই যুবক আদতে একজন পাচারকারী এবং প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ওই গৃহবধূকে কেরলে বিক্রি করে দেওয়ার ছক কষছে। এই সন্দেহ থেকেই তারা একটি পরিকল্পনা করে। গৃহবধূর হবু ননদ নিজেকে প্রেমিকা পরিচয় দিয়ে ওই যুবকের সঙ্গে মেসেজে কথা বলা চালিয়ে যান। এরপরই তাকে দেখা করার জন্য কোচবিহার বাস স্ট্যান্ডে আসতে বলা হয়।
পূর্ব পরিকল্পনা মতোই যুবকটি নির্দিষ্ট দিনে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছানো মাত্রই প্রেমিকার পরিবারের সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে মারধর শুরু করা হয় বলে অভিযোগ। আত্মরক্ষার জন্য পালাতে গিয়ে ওই যুবক পড়ে যান এবং মুখে গুরুতর চোট পান। বাস স্ট্যান্ডে উপস্থিত জনতা ও অন্য যাত্রীরা এই ঘটনায় হতবাক হয়ে যান। তাদের মধ্যেই কেউ পুলিশে খবর দিলে, কোতোয়ালি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহত যুবককে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয়। বর্তমানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রেমিকার পরিবারের পক্ষ থেকে পাচারের যে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রকাশ্য রাস্তায় আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মারধরের ঘটনাতেও পুলিশ পদক্ষেপ করবে বলে জানা গিয়েছে। একটি আপাত প্রেমের সম্পর্ক যে এমন হিংসাত্মক দিকে মোড় নিতে পারে, তা দেখে স্তম্ভিত কোচবিহারের মানুষ। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে এবং দুই পক্ষের বক্তব্যই শোনা হবে।