জম্মু, আন্তর্জাতিক সীমান্তে এবার গুপ্তচর পায়রার আনাগোনা। তার পায়ে বাঁধা স্লিপে লেখা রয়েছে হুমকি বার্তা। উর্দুতে ‘কাশ্মীর হামারা হ্যায়’ এবং ইংরেজিতে ‘জম্মু স্টেশন আইইডি ব্লাস্ট’। এই দুটি বার্তা নিয়েই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জম্মুর আরএস পুরা (Ranbir Pura) সেক্টরে। রবিবার সকালে এক বিএসএফ (Border Security Force) জওয়ানের হাতে আটক হয় পায়রাটি। এর পরই জম্মু তাওয়াই রেল স্টেশনের নিরাপত্তা কঠোর করা হয়েছে। যদিও আধিকারিকদের তরফে এই বিষয়টিকে রুটিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
হুমকি বার্তা: ‘কাশ্মীর আমাদের, সময় এসেছে’
রবিবার সকালে আরএস পুরা সেক্টরের আন্তর্জাতিক সীমান্তে টহল দিচ্ছিলেন এক বিএসএফ জওয়ান। তখনই তার নজরে আসে একটি পায়রা। পায়রাটির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় জওয়ান সেটিকে আটক করেন। এরপরই দেখা যায়, পায়রাটির পায়ের সঙ্গে একটি ছোট কাগজের স্লিপ বাঁধা। স্লিপটি খুলে দেখা যায়, তাতে হাতে লেখা দুটি বার্তা রয়েছে। একটি উর্দুতে এবং অন্যটি ইংরেজিতে। উর্দুতে লেখা রয়েছে, ‘কাশ্মীর হামারা হ্যায়, ওয়াক্ত আ গয়া হ্যায়, আয়েগা’ যার অর্থ, ‘কাশ্মীর আমাদের, সময় এসেছে, আসবে’। আর ইংরেজিতে লেখা, ‘JAMMU STATION IED BLAST THE END’ যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘জম্মু স্টেশন আইইডি বিস্ফোরণ, শেষ’। এই বার্তাটি অত্যন্ত উদ্বেগের সৃষ্টি করে। বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এই বিষয়ে জানানো হয়।
জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা: রেল স্টেশন জুড়ে হাই অ্যালার্ট
পায়রার পায়ের এই হুমকি বার্তা পাওয়ার পর দ্রুত জম্মু তাওয়াই রেল স্টেশন এবং তার সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, জিআরপি (Government Railway Police) এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলির যৌথ উদ্যোগে তল্লাশি অভিযান শুরু করা হয়েছে। স্টেশনে ঢোকার প্রতিটি পয়েন্টে মেটাল ডিটেক্টর এবং স্নিফার ডগ দিয়ে চেক করা হচ্ছে। যাত্রীদের ব্যাগপত্র এবং মালপত্রও খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বিএসএফের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই ধরনের হুমকির পর নিরাপত্তা জোরদার করা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তিনি আরও জানান, ‘আমরা এই ধরনের বার্তা গুরুত্ব সহকারে নিই, কিন্তু এর সত্যতা যাচাই না করে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না।’
যৌথ তদন্ত: উৎস সন্ধানে বিএসএফ
বিএসএফ আধিকারিকরা এখন পায়রাটির উৎস খোঁজার চেষ্টা করছেন। সাধারণত এই ধরনের পায়রা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং নির্দিষ্ট পথে যাতায়াত করে। বিএসএফের অনুমান, এটি সম্ভবত সীমান্তপারের কোনো এলাকা থেকে এসেছে। আধিকারিকরা অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সাথে সমন্বয় করে তদন্ত শুরু করেছেন। পায়রাটির পায়ের স্লিপে থাকা হাতের লেখা বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা চলছে এটি কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর কাজ কিনা। বিভিন্ন সময়ে সীমান্তে এই ধরনের গুপ্তচর পায়রা বা বেলুনের আনাগোনা দেখা গিয়েছে, তবে এই ধরনের স্পষ্ট হুমকির বার্তা এই প্রথম। ঘটনাটি নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশকেও অবহিত করা হয়েছে। তদন্তের সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ: নজরদারি বৃদ্ধি
এই ঘটনার পর সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। বিএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সীমান্তের প্রতিটি অংশে আরও বেশি সতর্ক থাকবে। এই ধরনের অপ্রত্যাশিত হুমকি মোকাবিলায় তারা সর্বদা প্রস্তুত। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, তার জন্য নতুন কিছু নিরাপত্তা প্রোটোকলও তৈরি করা হতে পারে। সামগ্রিকভাবে, গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে এবং নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছে। এই ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত মন্তব্য করা হবে না।