পরিবেশবান্ধব জ্বালানির সন্ধানে দীর্ঘদিন ধরেই ভারত নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে আসছে। এবার কেন্দ্র সরকার এক নতুন দিশার হদিশ দিল। সেই অনুযায়ী চাল থেকেও এবার তৈরি হবে ইথানল, যা মিশবে পেট্রোলে এবং চলবে যানবাহন। বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (FCI)। কেন্দ্রীয় সরকারও জানিয়ে দিয়েছে, ৫.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
কীভাবে চাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে জ্বালানি?
এই মুহূর্তে দেশের অনেক পেট্রোল পাম্পে বিক্রি শুরু হয়েছে E20 পেট্রোল। এটি এমন একটি পেট্রোল, যাতে ২০% ইথানল মেশানো থাকে। এই ইথানল তৈরি হয় প্রধানত আখ, ভুট্টা, ধান বা চালের মতো কৃষিজ ফসলের গাঁজনযোগ্য অংশ থেকে। মূলত এই খাদ্যবস্তুগুলি থেকে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় পরিবেশবান্ধব জ্বালানি।
আখ কম, চাল বেশি—বিকল্প খুঁজে নিল কেন্দ্র
২০২৫ সালে আখের উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। ফলে ইথানল তৈরিতে কাঁচামালের জোগানে সমস্যা তৈরি হয়। এই সমস্যা কাটাতে এবার চালকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছে কেন্দ্র। বরাদ্দ হয়েছে ৫.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল, যা দিয়ে প্রচুর পরিমাণ ইথানল তৈরি করা যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিবেশবান্ধব ও স্বদেশি, এক ঢিলে দুই পাখি!
E20 পেট্রোলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল—এটি পরিবেশ দূষণ অনেক কম করে। পাশাপাশি এটি দেশের কৃষকদের বাড়তি ফসলেরও বাজার তৈরি করে। অর্থাৎ, কৃষিপণ্যের সঠিক ব্যবহার এবং পরিবেশ রক্ষার দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে এই প্রকল্পে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, এটি ভারতের জ্বালানি আমদানি নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। কারণ, প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ তেল আমদানিতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার চাপের মুখে পড়ে।
কোন কোন ফসল থেকে তৈরি হয় ইথানল?
-
আখ
-
ভুট্টা
-
ধান (চাল)
-
কিছুক্ষেত্রে গম ও অন্যান্য শস্যের জৈববর্জ্য
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতে আরও কৃষিপণ্যকে এই জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কৃষকদের জন্য আশার আলো
এই প্রকল্পের আরেকটি বড় দিক হল কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নতি। অনেক সময় ফসলের বাজারদর না পাওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবার সরকার চাল-ভুট্টা কিনে জ্বালানি তৈরি করলে চাহিদা বাড়বে কৃষিপণ্যের। এর ফলে ফসল বিক্রির নিশ্চয়তা পেতে পারেন কৃষকরা।
বিশ্বে নজর কাড়বে ভারতীয় উদ্ভাবন?
যেখানে বিশ্বের একাধিক দেশ এখনও ফসিল ফুয়েল-নির্ভর, সেখানে ভারত চালের মতো খাদ্যশস্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের পথে হাঁটছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ভবিষ্যতে ভারতের ‘জ্বালানি স্বাধীনতা’ অর্জনের পথে এক বড় পদক্ষেপ হতে পারে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতির অধীন এই প্রকল্প ভারতের প্রযুক্তি ও কৃষিকৌশলের যুগ্ম সাফল্য বলেই মনে করছেন অনেকে।
চালের প্লেটে সীমাবদ্ধ না থেকে এবার দেশের জ্বালানি ট্যাঙ্কেও জায়গা করে নিল চাল! ভারতবর্ষ যখন পেট্রোলিয়াম আমদানির বদলে নিজস্ব কৃষি সম্পদ দিয়ে গাড়ি চালানোর স্বপ্ন দেখে, তখন সত্যিই বলা যায়—“চালেই চলবে দেশ!”