হঠাৎই গ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। তার মধ্যেই চিৎকার, ছোটাছুটি। আগরপাড়ার এক কারখানায় ঘটে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনা—কেমিক্যাল থেকে ছড়িয়ে পড়া বিষাক্ত গ্যাসে প্রাণ হারালেন দুই শ্রমিক। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটির আগরপাড়ায় অবস্থিত একটি বেসরকারি কারখানায়। শনিবার সকালে, কারখানার এক কর্মী রাসায়নিক ভর্তি একটি ড্রাম ড্রেন লাইনে ফেলার কাজ করছিলেন। ঠিক তখনই আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে একধরনের বিষাক্ত গ্যাস। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, গ্যাসটি অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং শ্বাসযন্ত্রে তীব্র প্রভাব ফেলে।
অসুস্থ হয়ে পড়েন দুই শ্রমিক
গ্যাস ছড়ানোর ঠিক পরেই দুই শ্রমিক আচমকাই বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেন। সহকর্মীরা তাঁদের উদ্ধার করে তড়িঘড়ি করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে চিকিৎসকরা জানান, তাঁদের মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে আনা হয়েছিল। মৃত শ্রমিকদের নাম এখনও পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।
আতঙ্ক ছড়াল গোটা এলাকায়
কারখানায় ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্য ছড়ায় আশপাশের এলাকায়। বহু মানুষ কারখানার সামনে জড়ো হন। তাঁদের অনেকেই অভিযোগ করেন, এই ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহারে কোনও রকম সতর্কতা মানা হয় না। দুর্ঘটনার সময় কারখানায় কোনও রকম সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তদন্তে নেমেছে প্রশাসন
ঘটনার পর কামারহাটি পুরসভা ও স্থানীয় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কারখানার মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কারখানাটির পরিবেশগত ছাড়পত্র ও রাসায়নিক ব্যবহারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তে গাফিলতির প্রমাণ মিললে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আগেও ঘটেছে এই ধরনের দুর্ঘটনা
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, আগেও একাধিকবার ওই কারখানা থেকে গ্যাস বেরোনোর ঘটনা ঘটেছে। যদিও তখন বড় কোনও ক্ষতি হয়নি। এবার তা প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়াল। পরিবেশবিদ ও শ্রমিক সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই কারখানার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত করা হচ্ছে, তা নিয়ে ফের একবার প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্যের ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলি। একটি ভুলে প্রাণ গেল দু’জনের। সেই দায় কি শুধু গাফিলতির, নাকি আছে আরও গভীর অব্যবস্থার ছবি?