শুধু একটি চিপসের প্যাকেটের লোভ। আর তারই জেরে নরক যন্ত্রণার শিকার মাত্র ৬ বছরের একটি মেয়ে। অভিযোগ, উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে এক মুদির দোকানদার ওই শিশুকে ধর্ষণ করে। আর এখানেই শেষ নয়। অভিযুক্তকে রক্ষা করতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রবীর মজুমদার টাকার লোভ ও হুমকি দেন বলে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছে নির্যাতিতার পরিবার। ঘটনায় সিঁড়ি বেয়ে রাজনীতির মোড়—পাল্টা তোপে বিজেপি নেতা কৌস্তুভ বাগচী।
এপ্রিলের ঘটনায় রবিবার ফের উত্তাল রাজনীতি
ঘটনাটি ঘটে ২৫ এপ্রিল। অশোকনগরের বাসিন্দা ছয় বছরের এক শিশুকন্যা স্কুল থেকে ফিরছিল। সেই সময় স্থানীয় মুদিদোকানি শফিক মণ্ডল তাকে দোকানে ডেকে চিপস খাওয়ানোর নাম করে ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানেই ঘটায় পাশবিকতা। শিশুটি কান্নাকাটি করে বাড়ি ফিরে ঘটনাটি জানায়। এরপর পরিবারের তরফে অশোকনগর থানায় অভিযোগ জানানো হয়।
বিজেপির পোস্টে নাম ফাঁস তৃণমূল নেতার
রবিবার দুপুরে বিজেপি নেতা কৌস্তুভ বাগচী নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তৃণমূল নেতা প্রবীর মজুমদার (গুপি)-র ছবি সহ দুটি গুরুত্বপূর্ণ নথি পোস্ট করেন। সেখানে দাবি, “অভিযুক্তকে রক্ষা করতে নির্যাতিতার পরিবারকে টাকা ও রাজনৈতিক চাপ দেওয়া হয়।” অভিযোগ, প্রবীর মজুমদার থানায় গিয়ে পুলিশকে চাপ দেন মামলা না নিতে। এরপর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি ‘টাকার বিনিময়ে মিটিয়ে নিতে’ বলেন।
পরিবার রাজি না হওয়ায় হুমকিও দেওয়া হয়, এমনটাই অভিযোগ।
মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ পরিবার, চিঠিতে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ
এই পরিস্থিতিতে পরিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি চিঠি লেখে। সেখানে সরাসরি প্রবীর মজুমদারকে ‘মূল চক্রান্তকারী’ বলে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, “আমাদের মেয়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া পাশবিক অপরাধকে চাপা দিতে টাকা ও ভয় দেখানো হয়েছে। দোষীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।”
গ্রেফতার অভিযুক্ত, আত্মপক্ষ সমর্থনে তৃণমূল নেতা
অশোকনগর থানার এক আধিকারিক জানান, অভিযুক্ত শফিক মণ্ডলকে গ্রেফতার করে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
তবে বিতর্কে থাকা তৃণমূল নেতা প্রবীর মজুমদার বলেছেন, “ঘটনার সময় আমি কাশ্মীরে ছিলাম। সুতরাং আমি জড়িত কীভাবে? এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করছে।” তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি আইনজীবীর পরামর্শ নেবেন।
রাজনীতির ছায়ায় শিশুকন্যার বিচারপ্রক্রিয়া?
বস্তুত, রাজ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু বারবার অভিযোগ ওঠে—ক্ষমতাশালীদের চাপে ‘বিচার’ নয়, বরং ‘মিটমাটের চেষ্টা’ হয় বেশি।
এই ঘটনার ক্ষেত্রেও উঠছে একই প্রশ্ন: “এক শিশুকে ধর্ষণের বিচার কি রাজনীতির বলি হবে?” রাজনীতি নয়, এবার ‘ন্যায়’ই কি হবে একমাত্র মুখ্য বিষয়?
উত্তর খুঁজছে গোটা রাজ্য।