আজ, শুক্রবার (১৬ মে), পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের জন্য সুপ্রিম কোর্টের তরফে এল এক বড় সিদ্ধান্ত। ডিএ মামলার আজ বড়সড়ো নির্দেশ জানালো দেশের শীর্ষ আদালত। মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে বকেয়া মহার্ঘভাতার ২৫% মিটিয়ে দিতে হবে। এই আদেশ দিয়েছে বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং সন্দীপ মেহতা-র ডিভিশন বেঞ্চ। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগস্টে। তবে এর মধ্যে বকেয়ার অন্তত এক-চতুর্থাংশ কর্মীদের হাতে তুলে দিতেই হবে, এমনটাই নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের।
একদিকে সরকারি কর্মীদের মুখে হাসি, অন্যদিকে রাজ্যের কপালে চিন্তার ভাঁজ
এই রায়কে সরকারি কর্মীদের অনেকেই একপ্রকার “আংশিক জয়” হিসেবেই দেখছেন। যদিও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এই নির্দেশ পালন করতে গেলে রাজ্যের উপর পড়বে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক বোঝা।অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতের কাছে বলেন, “রাজ্যের পক্ষে এত অল্প সময়ে এত টাকা দেওয়া কার্যত অসম্ভব।” কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দেয়—“এরা আপনাদেরই কর্মী। তাই তাদের পাওনা মেটাতে অসুবিধা কোথায়?”
কেন এত বছর ধরে চলছে এই ডিএ-র টানাপোড়েন?
এই বিতর্কের গোড়ায় রয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে ডিএ (মহার্ঘভাতা) দেওয়ার ফারাক। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা পান ৫৫% ডিএ, আর পশ্চিমবঙ্গের কর্মীরা পান মাত্র ১৮%, তাও সম্প্রতি ৪% বৃদ্ধির পর। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই ২০২২ সালে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের একাংশ হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের অনুরূপ হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। রাজ্য সরকার সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। সেই মামলারই আজ অন্তর্বর্তী পর্যায়ের নির্দেশ এসেছে।
২৫% এখন? বাকি টা কবে?
শুরুতে আদালত রাজ্যকে বকেয়ার ৫০% দেওয়ার নির্দেশ দিতে চেয়েছিল, পরে কিছুটা ছাড় দিয়ে আপাতত ২৫% মেটানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু আগস্টে ফের শুনানি হবে, এবং তখন আরও বড় নির্দেশ আসতে পারে বলে মনে করছেন মামলাকারীরা। অর্থাৎ আগামী দিনে বাকি টাকাও দিতে হতে পারে রাজ্যকে।
সরকারি কর্মীদের অ্যাকাউন্টে কত টাকা আসতে পারে?
এখন সরকারি কর্মীদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—“আমার অ্যাকাউন্টে কত টাকা ঢুকবে?”এই নির্দেশের পর কর্মচারী অনুযায়ী হাজার থেকে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত বকেয়া আসতে পারে বলে ধারণা করছেন অর্থ বিশেষজ্ঞরা। তবে তার জন্য রাজ্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, নইলে আদালতের অবমাননার মুখে পড়তে হবে।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ একদিকে যেমন সরকারি কর্মীদের স্বস্তি দিয়েছে, তেমনই রাজ্য সরকারের জন্য নতুন দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে। অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রেখে কি আদৌ এত টাকা বকেয়া মেটানো সম্ভব? নাকি আবারও সময় চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবে রাজ্য? আদালত নির্দেশ দিল বর্তমানে এই প্রশ্নগুলোর নিয়ে চিন্তায় রয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।