ভোরবেলা যখন গোটা গ্রাম ঘুম ভাঙানোর অপেক্ষায়, তখনই সামনে এল এমন এক দৃশ্য যা শিউরে ওঠার মতো। হুগলির আরামবাগের গোঘাট ব্লকের সানবান্ধি গ্রামে নিজ বাড়ির বারান্দা থেকে উদ্ধার হল এক BJP নেতার ঝুলন্ত দেহ। শুধু ঝুলন্তই নয়, তাঁর দুই হাত ও দুই পা বাঁধা ছিল—যা নিয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে।
মৃতের নাম ও পরিচয়
মৃতের নাম বাকিবুল্লা শেখ, বয়স ৩৫ বছর। তিনি বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের স্থানীয় সভাপতি পদে ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোররাতে প্রথমে তাঁর বাবার নজরে আসে ঝুলন্ত দেহটি। তিনি দড়ি কেটে নামিয়ে আনেন ছেলেকে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
আত্মহত্যা, না কি পরিকল্পিত খুন?
দেহ উদ্ধারের পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে—এ কি নিছক আত্মহত্যা, না কি এর পিছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত হত্যার ছক? কারণ একজন ব্যক্তি কীভাবে নিজেই নিজের হাত ও পা বেঁধে আত্মহত্যা করতে পারেন? স্থানীয়দের দাবি, এই মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই বাকিবুল্লা শেখ নানা হুমকি ও শারীরিক নিগ্রহের শিকার হচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ তাঁদের।
রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি
খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক বিমল ঘোষ ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী এভাবে মারা যেতে পারেন না, নিশ্চয়ই এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।’’
পুলিশি তদন্ত শুরু
সকাল সাতটা নাগাদ পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে কোনও সন্দেহভাজনের নাম পুলিশ প্রকাশ করেনি। তদন্ত শুরু হয়েছে। ফরেনসিক দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বলে খবর। বাড়ির আশেপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এলাকায় উত্তেজনা
ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়েছে। গ্রামবাসীরা দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন এবং পুলিশের ওপর চাপ তৈরি করছেন যাতে সত্য উদঘাটন করা যায়। গ্রামে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাকিবুল্লার পরিবারের দাবি, তাঁকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে প্রতিপক্ষরা এই ষড়যন্ত্র করে থাকতে পারে বলেও তাঁদের আশঙ্কা। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে কিছু বলা সম্ভব নয়।
একজন রাজনৈতিক নেতার এমন রহস্যময় মৃত্যুতে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংঘর্ষের পরিবেশ নিয়ে। ময়নাতদন্ত ও পুলিশের রিপোর্টের ওপর এখন নির্ভর করছে, আদৌ এটি আত্মহত্যা না পরিকল্পিত খুন।