Suvendu Adhikari : দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের পক্ষ থেকে রাজ্যের ঘরে ঘরে প্রসাদ পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৭ জুন রথযাত্রার আগে এই ‘প্রসাদ’ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। তবে তার আগেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। বিতরণযোগ্য এই প্যাকেটে থাকছে ২০ গ্রামের প্যাঁড়া ও ৬০ গ্রামের গজা, সঙ্গে মন্দিরের ছবি। অথচ এই গজা-প্যাঁড়া স্থানীয় মিষ্টির দোকান থেকেই সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তাদের।
‘এটা কি ভগবানের প্রসাদ? না পাড়ার দোকানের মিষ্টি?’
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই মিষ্টি যদি বাজার থেকে কিনেই দেওয়া হয়, তাহলে সেটা কী করে ‘প্রসাদ’ হতে পারে? এটা তো হিন্দুদের বিশ্বাসে সরাসরি আঘাত।” তিনি আরও বলেন, “মানুষ যেন এটা শুধুই মিষ্টি হিসেবে খায়, প্রসাদ হিসেবে নয়।”
নবান্নের তরফে নির্দিষ্ট ‘প্রসাদ রেসিপি’
এই বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে খাদ্যদফতরের প্রকল্প ‘দুয়ারে রেশন’-কে। বিডিওদের জানানো হয়েছে, কীভাবে বিতরণ হবে, কারা করবেন এবং কোথা থেকে সংগ্রহ করতে হবে সেই মিষ্টি। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্যাঁড়া ও গজার আকার, রং, ওজন সবই নির্ধারিত। যেমন—২০ গ্রামের প্যাঁড়া হবে ৪.৮ সেন্টিমিটার মোটা। গজার ওজন ৬০ গ্রাম, রং খয়েরি, লম্বায় ৩.২ সেন্টিমিটার ও চওড়ায় ৩.১ সেন্টিমিটার। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে খোয়া ক্ষীর, চিনি, এলাচ, জায়ফল, ঘি ও ময়দা।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?
এই বিতরণ ব্যবস্থা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনা থেকেই এসেছে বলে অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল। শুভেন্দুর অভিযোগ, “ভগবানের নামে ভোটের মিষ্টি বিলি হচ্ছে। ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করা হচ্ছে।” এই বিতরণ রাজনীতির উদ্দেশ্যেই বলে মনে করছেন তিনি।
ধর্ম বনাম প্রশাসন—বিতর্ক ঘনাচ্ছে
প্রসাদ মানে শুধুমাত্র খাবার নয়, তা এক ধরনের ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ। সেটাকে যদি বাজার থেকে কেনা মিষ্টি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়, তাহলে তা কতটা যুক্তিযুক্ত? এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমানসে। শুভেন্দুর মন্তব্যে বিভক্ত মত—একাংশ বলছে ‘বিতর্কের কিছু নেই’, অন্যরা বলছে ‘বিশ্বাসে আঘাত’।
উল্লেখ্য, রাজ্যজুড়ে ধর্মীয় ভাবাবেগ যখন তুঙ্গে, তখন দিঘার মন্দির থেকে বিতরণযোগ্য মিষ্টি নিয়ে এমন বিতর্ক নতুন করে রাজনীতির উত্তাপ বাড়াচ্ছে। রথযাত্রার আবহে প্রসাদ বিতরণ কি এক পবিত্র উদ্যোগ, নাকি রাজনৈতিক চাল? উত্তর খুঁজছে পশ্চিমবঙ্গ।