Mid Day Meal Controversy : একই স্কুলে পড়াশোনা, একসঙ্গে খেলাধুলা—তবু পাতে ভাগ! পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হিন্দু ও মুসলিম ছাত্রদের জন্য আলাদা করে রান্না ও পরিবেশনের ঘটনায় নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে শিক্ষা মহলে। জানা গিয়েছে, কিশোরীগঞ্জ গ্রামে অবস্থিত ওই প্রাথমিক স্কুলে মোট ৭২ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। শিক্ষক রয়েছেন চারজন। তবে সম্প্রতি উঠে এসেছে, মধ্যাহ্নভোজের (Mid-Day Meal) জন্য ছাত্রদের ধর্ম অনুযায়ী আলাদা ভাবে খাবার রান্না করা হচ্ছে এবং পরিবেশনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে পৃথক বাসনপত্র। খাওয়ার জায়গাও নাকি আলাদা।
রাঁধুনি-গ্যাস আলাদা… বহুদিন ধরে চলছে এই প্রথা
এই প্রথা নতুন নয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্তত ২০ বছর ধরে এমনভাবেই খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা চলে আসছে। হিন্দু পড়ুয়াদের জন্য রান্না করেন একজন নির্দিষ্ট রাঁধুনি—সোনালী মজুমদার, যিনি প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য রান্না করেন। মুসলিম পড়ুয়াদের জন্য অন্য একজন আলাদা রান্না করেন। তবে রান্নার জন্য ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারটি এছলছ এ নিয়ে যদিও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা অভিভাবকদের মধ্যে এখনো বড়সড় অশান্তির খবর মেলেনি। অনেকেই এটিকে দীর্ঘদিনের ‘প্রথা’ বলেই মেনে নিচ্ছেন। তবে শিক্ষা দফতরের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর তৎপর হয়েছেন। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা আধিকারিকরা ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, দ্রুত আলাদা রান্না এবং পরিবেশনের এই ব্যবস্থা বন্ধ করে, পুনরায় একত্রে খাওয়ার পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। স্কুলে সব ছাত্রছাত্রী যাতে সমান সুযোগ ও অভিজ্ঞতা পায়, সেই দিকেই জোর দেওয়া হচ্ছে।
শুধু প্রশাসন নয়, মনোবিজ্ঞানীদের নজরেও বিষয়টি
শুধু প্রশাসন নয়, মনোবিজ্ঞানীরাও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। এক শিশুমন বিশেষজ্ঞ জানান, “ছোটবেলা থেকে যদি ধর্ম অনুযায়ী এমন বিভাজন করা হয়, তা শিশুদের মধ্যে অবচেতন ভাবে সাম্প্রদায়িক মনোভাব গড়ে তুলতে পারে। স্কুলে শিক্ষার পাশাপাশি মানবিকতা শেখানোও জরুরি।”
পূর্ব বর্ধমানের মতো একটি শান্তিপূর্ণ এলাকায় এই ধরনের ঘটনা প্রাথমিকভাবে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি না করলেও, ভবিষ্যতের জন্য তা চিন্তার বিষয় হয়ে উঠছে বলেই মত শিক্ষামহলের। শিক্ষা দফতরের তরফে কড়া নজর রাখা হচ্ছে যাতে এই বিভাজন অবিলম্বে বন্ধ হয় এবং স্কুলে সর্বধর্ম সমন্বয়ের পরিবেশ বজায় থাকে।