Ghatal Master Plan : যুগের পর যুগ ধরে ঘাটালবাসীর স্বপ্ন হয়ে ছিল একটি কার্যকর ও স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বড় পদক্ষেপের ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সরকারি সফরে এসে তিনি জানান, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ আগামী তিন বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে। তাঁর এই ঘোষণায় জেলাজুড়ে স্বস্তির হাওয়া বইছে। ঘাটাল মহকুমা বন্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। প্রায় প্রতি বছর বর্ষার সময় প্রবল জলাবদ্ধতায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বহুদিন ধরেই ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ নামক একটি বৃহৎ প্রকল্পের দাবি করে আসছিলেন এখানকার বাসিন্দারা।
বহু প্রতীক্ষিত প্রকল্পে নতুন গতি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “এই প্রকল্প নিয়ে আমরা বহুবার কেন্দ্রের দরজায় গিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্র বরাবরই সহযোগিতায় গড়িমসি করেছে। তাই রাজ্য নিজেই এই কাজ শেষ করার দায়িত্ব নিয়েছে।” তিনি বলেন, প্রকল্পের জন্য রাজ্য বাজেট থেকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে এবং কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের আওতায় নদী সংস্কার, নিকাশি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, বাঁধ নির্মাণ এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকাঠামো তৈরি করা হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে নজরদারির বার্তা
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই প্রকল্প আমার ব্যক্তিগত ভাবনাতেও রয়েছে। আমি চাই, ঘাটালের মানুষ যেন আর প্রতিবছর বন্যা নিয়ে আতঙ্কে না থাকেন।” একই সঙ্গে প্রশাসনিক আধিকারিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কাজের গুণমান এবং সময়মতো শেষ হওয়া—দুটোই দেখতে হবে। কোথাও গাফিলতি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” তিনি এও জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি পৃথক নজরদারি কমিটি গঠন করা হবে, যারা কাজের অগ্রগতি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবে। ঘাটালে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে ঘাটালের মানুষের আবেগকে কাজে লাগাতে চাইছেন মমতা। তবে তৃণমূল নেতাদের দাবি, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কোনও নির্বাচনী গিমিক নয়, বরং বহুদিনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ফল।”
জনমনে আশার সঞ্চার
স্থানীয় মানুষজন ও কৃষকদের বড় অংশ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা জলমগ্ন ফসল হারানোর আতঙ্কে কাটান, তাঁরা বলছেন, “এতদিন শুধু কথা শুনেছি। এবার যদি কাজ সত্যিই হয়, তবে ঘাটালের ইতিহাস বদলে যাবে।” এই প্রকল্প সফল হলে ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যামুক্ত হওয়ার পাশাপাশি কৃষি ও জনজীবনের স্থায়িত্ব আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।