দিনের আলোয় শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে অপহরণ, আর তার পরদিনই প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে মিলল গামছা দিয়ে মুখ বাঁধা দেহ! হাওড়া থেকে নিখোঁজ হওয়া অনিমেষ মিত্রর এমন করুণ পরিণতিতে চাঞ্চল্য ছড়াল রাজ্যের দুই জেলায়। সুত্রের খবর অনুযায়ী জানা যায়, নৈহাটির বাসিন্দা অনিমেষ মিত্র, বয়স আনুমানিক ৪৫, হাওড়ার ফোরশোর রোডের একটি বিস্কুট কারখানায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে যাওয়ার জন্য বের হন। তারপর থেকেই তাঁর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কোথা থেকে উদ্ধার দেহ?
শুক্রবার সকালেই বোলপুরের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে গামছা দিয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় এক পুরুষের দেহ। পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর জানা যায়, মৃত ব্যক্তি অনিমেষ মিত্র। দেহটি শনাক্ত করেন তাঁর আত্মীয়েরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অপহরণের পরেই খুন করা হয়েছে।
কীভাবে ধরা পড়ল অভিযুক্ত?
হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্ত শুরু করেন। সেখানে দেখা যায়, অনিমেষকে একটি বাইকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাইকে তিনজন—মাঝে বসানো হয়েছিল অনিমেষকে। সেই সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকার বাসিন্দা অভিষেক সোনকরকে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিষেক ছিলেন অনিমেষের পূর্বপরিচিত।
লুঠের জন্যই কি খুন?
তদন্তে উঠে এসেছে, অনিমেষ যখন ফ্যাক্টরির টাকাসহ বের হন, তখন থেকেই তাঁকে লক্ষ্য করা হচ্ছিল। পুলিশের অনুমান, টাকা লুঠ করতেই পরিকল্পনা করে তাঁকে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের সামনে থেকে বাইকে তুলে অপহরণ করা হয়। তারপর বোলপুরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডকে ‘প্রি-প্ল্যানড রোড ক্রাইম’ বলে মনে করছে পুলিশ। আরও কারা এতে জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের সন্ধান পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে তদন্তকারীরা।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নৈহাটির বিধায়ক। তাঁর অভিযোগ, “এটা শুধুই টাকা লুঠের উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিত খুন। পুলিশি তৎপরতায় একজন ধরা পড়েছে ঠিকই, কিন্তু মূল চক্রীদের খুঁজে বার করতেই হবে।” হাওড়া পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হচ্ছে। টাকা উদ্ধারের চেষ্টাও চলছে।”