দীর্ঘদিন ধরেই পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার সাধারণ যাত্রীদের দাবি ছিল কম খরচে একাধিক স্টপেজ-সহ একটি নতুন রেল পরিষেবার। সেই দাবি এবার পূরণ করল রেলমন্ত্রক। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুভ সূচনা হল হাওড়া-পুরুলিয়া কর্ড লাইন হয়ে চলা নতুন স্পেশ্যাল মেমু ট্রেনের। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব হাওড়ার সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রেনটির যাত্রা শুরু করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, হাওড়ার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো এবং আদ্রা ডিভিশনের ডিআরএম সুনীত নারুলা। অনুষ্ঠানে স্থানীয় বহু মানুষ এবং রেলকর্মীরাও অংশ নেন।
পুরুলিয়া থেকে হাওড়া—কোন পথে ছুটবে ট্রেন?
এই নতুন ট্রেনটি চলবে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া-মশাগ্রাম-হাওড়া রুটে। কর্ড লাইন ধরে ছুটবে এই ট্রেন, যা একদিকে যেমন স্থানীয় যাত্রীদের স্বস্তি দেবে, তেমনই বিকল্প রুট হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। রেল সূত্রে জানা গেছে, এই ট্রেনটি রুটের প্রতিটি স্টেশনে থামবে। অর্থাৎ, এক্সপ্রেস ট্রেনের তুলনায় সময় বেশি লাগলেও যাত্রী সুবিধার দিক থেকে অনেক বেশি কার্যকর হবে।
সময়সূচি কী?
নতুন মেমু ট্রেনের সময়সূচি নিম্নরূপ:
-
পুরুলিয়া থেকে ছাড়বে: ভোর ৪:০০
-
হাওড়ায় পৌঁছাবে: সকাল ১১:৪০
-
মোট যাত্রাসময়: ৭ ঘণ্টা ৪০ মিনিট
রিটার্ন ট্রেন:
-
হাওড়া থেকে ছাড়বে: বিকেল ৪:১৫
-
পুরুলিয়ায় পৌঁছাবে: রাত ১১:৫৫
এটি এখন প্রতিদিন চলবে বলে জানিয়েছে রেল দপ্তর।
কত ভাড়া?
সাধারণ যাত্রীদের সবচেয়ে বড় স্বস্তির বিষয় হল ট্রেনটির কম ভাড়া। পুরুলিয়া থেকে হাওড়া পর্যন্ত যাত্রার জন্য একবারের ভাড়া মাত্র ৬০ টাকা। একই রুটে এক্সপ্রেস ট্রেনে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা, তবে তার ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ। সাশ্রয়ী মূল্যে দীর্ঘপথের যাত্রীদের জন্য এই ট্রেন অত্যন্ত উপকারী হবে বলে মনে করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
কত কামরার ট্রেন? ভবিষ্যতে কী পরিকল্পনা?
বর্তমানে ট্রেনটিতে ৮টি কামরা রয়েছে। যাত্রীচাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে তা বাড়িয়ে ১২ কামরা করা হতে পারে। প্রাথমিকভাবে যাত্রী সাড়া দেখে তারপরই বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আদ্রা ডিভিশনের আধিকারিকেরা। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও মশাগ্রামের যাত্রীদের মধ্যে এই ট্রেন নিয়ে উৎসাহ তুঙ্গে। অনেকেই বলছেন, এতদিন পর্যন্ত বিকল্প রুটে কোনও সাশ্রয়ী ট্রেন না থাকায় তাঁদের সমস্যায় পড়তে হত। এই ট্রেনটি তাঁদের দৈনন্দিন যাতায়াত অনেকটাই সহজ করে তুলবে। বিশেষ করে চাকুরিজীবী, পরীক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।
রেলের এই নতুন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিশা দেখাল। একদিকে যেমন স্থানীয় যোগাযোগ উন্নত হল, তেমনই হাওড়া-পুরুলিয়া রুটে তৈরি হল আরও একটি বিকল্প যাত্রাপথ। ৬০ টাকার ট্রেনে প্রায় ৮ ঘণ্টার যাত্রা—খুব অল্প সময়ে এই ট্রেন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলেই আশাবাদী রেল কর্তৃপক্ষ। এখন দেখার, ভবিষ্যতে এই রুটে আরও কত রেল পরিষেবা যুক্ত হয়।