বর্জ্য আর শুধু বর্জ্য নয়—সেই থেকেই আসবে ভবিষ্যতের সম্পদ। এই লক্ষ্য নিয়েই কলকাতা পুরসভার তরফে ধাপা বর্জ্য ডাম্পিং গ্রাউন্ডে চালু করা হল তিনটি নতুন রিসাইক্লিং ইউনিট। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও আধুনিক পদ্ধতির দিকে এক বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে এই প্রকল্পকে। নতুন এই ইউনিটগুলির মাধ্যমে প্রতিদিন ১২০ টন শুকনো ও অজৈব বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হবে।
নতুন কোন কোন ইউনিট চালু হল?
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি ইউনিটের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল Material Recovery Facility (MRF), যেখানে প্রতিদিন ১০০ টন শুকনো বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ হবে। এটি এখনই চালু হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও দুটি ছোট ইউনিট চালু হয়েছে—একটি প্লাস্টিক প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট (১০ টন/দিন) ও একটি থার্মোকল প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট (১০ টন/দিন)। পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম নতুন এই কেন্দ্রগুলির উদ্বোধন করেন। তিনি জানান, “পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। এবার আমাদের লক্ষ্য হলো শহরের প্রতিটি অংশ থেকে প্লাস্টিক ও থার্মোকল বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ করা ও তা রিসাইকেল করা।”
রিসাইক্লিং-এর পর কি হবে এই বর্জ্যের?
প্লাস্টিক ইউনিটে প্রক্রিয়া হওয়া বর্জ্য থেকে চেয়ার, টেবিলের মতো বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যেই একটি সরকার পোষিত স্কুলের জন্য ২০০টি চেয়ার ও টেবিল তৈরির অর্ডার এসেছে পুরসভার কাছে। থার্মোকল প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট মূলত শহরের মাছ বাজারগুলির থার্মোকল বর্জ্য নিয়ে কাজ করবে, যেগুলি বহু সময় ড্রেনেজ ব্লকেজের কারণ হয়ে দাঁড়াত। এখন সেই সমস্যা কমবে বলে আশা পুরসভার।
ধাপার বর্তমান চিত্র
বর্তমানে ধাপা বর্জ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন ৪,০০০ থেকে ৪,৫০০ টন বর্জ্য জমা হয়। এর মধ্যে প্রায় ১,৫০০ টন বর্জ্য রিসাইকেল করা সম্ভব হচ্ছে। তবে বাকি বিশাল পরিমাণ বর্জ্য মাটিতে স্তূপ হয়ে জমে থাকছে, যার ফলে একদিকে যেমন আগ্নেয় দুর্ঘটনা, তেমনই ভূগর্ভস্থ জলে বিষক্রিয়া বাড়ছে। নতুন ইউনিটগুলি চালু হওয়ার ফলে এই বর্জ্যের একটি বড় অংশ পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব হবে, ফলে পরিবেশ দূষণ কমবে এবং জমির ওপর চাপও হ্রাস পাবে।
আর্থিক দিক থেকেও লাভজনক পরিকল্পনা
পুরসভার অনুমান, আগামী ২০ বছরে কলকাতার বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ থেকে শহরের মোট রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ আসবে। অর্থাৎ বর্জ্য এবার শুধুই সমস্যা নয়, বরং তা শহরের অর্থনীতির অন্যতম অংশ হতে চলেছে। এই উদ্যোগকে পরিবেশবিদ ও নাগরিক সমাজ অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। কারণ শহরের যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার প্রবণতা কমবে, ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি আধুনিক মডেল তৈরি হবে। একইসঙ্গে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যা, দূষণ, দুর্ঘটনা—সব কিছুই নিয়ন্ত্রণে আসবে।