পাশের গ্রামে বৃষ্টি হলেই অনেকে আকাশের দিকে চেয়ে বলেন, “গাছদাদা আবার কিছু একটা লাগিয়েছে নিশ্চয়!” হাওড়ার গ্রামীণ প্রান্তে এই নামেই পরিচিত পরিবেশপ্রেমী সৌরভ মণ্ডল। সাত বছর ধরে একা হাতে নয়, বরং একদল স্বেচ্ছাসেবীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন প্রকৃতির এক মাইলফলক।
৩০ হাজার গাছ, ৭ বছরের নিরলস লড়াই
২০১৭ সালে জয়পুর, থলিয়া, বিনলা, আমরাগড়ি সহ একাধিক গ্রামের ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেন সৌরভ। প্রথমে তাঁকে কটাক্ষ করা হলেও থেমে যাননি। প্রতিটি চারা নিজে কিনে, রোপণ করে নিয়মিত জল দেওয়া, মাটি দেওয়া—সবই করেছেন নিজের হাতে। এখন পর্যন্ত তিনি এবং তাঁর দল মিলে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়েছেন।
জিও-ট্যাগিংয়ে নজরদারি, ফলদ গাছে ফল
শুধু গাছ লাগানোতেই থেমে নেই এই প্রকল্প। বর্তমানে যেসব গাছ বড় হয়ে উঠেছে, সেগুলির উপর চলছে জিও-ট্যাগিং—যার মাধ্যমে গাছগুলির বেঁচে থাকা, অবস্থান ও বৃদ্ধির হিসেব রাখা হচ্ছে।
এক হাজারেরও বেশি গাছ আজ ফল দিচ্ছে—আম, জাম, কাঁঠাল থেকে শুরু করে খিরিশ ও বট-পাকুড় পর্যন্ত।
পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা ছড়াতে ‘সিডস বল’
গাছ লাগানো যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সচেতনতা গড়ে তোলা ততটাই প্রাসঙ্গিক। সেই লক্ষ্যেই সৌরভ তৈরি করেছেন ‘সিডস বল’। শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মাটির সঙ্গে বীজ মেশানো বল, যা তারা যেকোনও ফাঁকা জমিতে ছুঁড়ে দিতে পারে। সেখানেই অঙ্কুরিত হয় নতুন গাছ।
গ্রাম বাংলার বাঁধেও গাছের ছোঁয়া
শুধু গ্রাম নয়, গ্রামের বাঁধ ঘেঁষে তালসারি কাঠামোর রূপও বদলাচ্ছে সৌরভের উদ্যোগে। খেজুর ও তাল গাছের চারা লাগানো হচ্ছে জলে প্লাবিত এলাকাগুলোর ধার বরাবর, যা মাটির ক্ষয় রোধে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন অনেকে।
প্রশংসায় ভাসছে স্থানীয়রাও
গ্রামের মানুষ এখন গর্ব করে বলেন, “আমাদের সৌরভ শুধু গাছ লাগাচ্ছেন না, একটা প্রজন্ম গড়ে তুলছেন।” শিক্ষকরাও বলছেন, স্কুলে পরিবেশ শিক্ষা পড়ানো হয় ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ শেখা যায় ‘গাছদাদার’ কাছ থেকেই।