গত কয়েকদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে কেন্দ্রে তুলসী গাছ। এই পবিত্র গাছ নিয়ে সরব বিজেপি নেতারা, যাদের দাবি—রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে তুলসী বসানোর বিরোধিতা করে সরকার হিন্দু সংস্কৃতিকে অপমান করছে। এমনকী বিধানসভার মধ্যেই মাথায় তুলসী গাছ নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গিয়েছে বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর সহকর্মীদের। এই প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া জবাব: “আমার বাড়িতে ৪০টা তুলসী গাছ আছে। সব জায়গায় লাগানো যায় না, নিয়ম মেনেই তুলসী বসাতে হয়। এটা তো ধর্মীয় বিষয়।”
‘তুলসীর মধ্যে লক্ষ্মীও আছেন, নারায়ণও আছেন’
বুধবার কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তুলসী নিয়ে বিজেপির এই নাটক মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, “তুলসী কয় রকমের হয় জানেন? তুলসীর মধ্যে লক্ষ্মীও আছে, নারায়ণও আছে। সব জায়গায় তুলসী গাছ লাগানো যায় না। সম্মানের সঙ্গে লাগাতে হয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা শ্রীকৃষ্ণকে তুলসী দিই, জগন্নাথকে তুলসী দিই। এগুলোর ধর্মীয় গাম্ভীর্য আছে। আর আপনারা এটাকে রাজনৈতিক অস্ত্র বানাচ্ছেন।”
‘নিজের বাড়িতে লাগাননি? তাহলে অন্যের মাথায় তুলসী গাছ কেন?’
মমতার বক্তব্যে উঠে এসেছে কটাক্ষের সুর। তিনি বলেন, “আপনি নিজের বাড়িতে তুলসী গাছ লাগালেন না কেন? নিজের ধর্মকে সম্মান করবেন না, আর অন্যের উপর চাপিয়ে দেবেন?” তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন—ধর্মীয় প্রতীক বা আচারের অপব্যবহার করে রাজনীতি করা উচিত নয়। “এভাবে দেবতাদের অসম্মান করা হয়। এগুলো অন্যায়।”
রবীন্দ্র নগরের বিতর্ক ঘিরেই বিজেপির প্রতিবাদ
তুলসী নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত রবীন্দ্র নগর এলাকায়। অভিযোগ, সেখানে স্থানীয় প্রশাসন তুলসী গাছ বসানো নিয়ে আপত্তি জানায়। এরপরেই বিজেপি প্রতিবাদে নামে। বিজেপির দাবি ছিল, সরকারের হিন্দু বিরোধী মানসিকতা বারবার স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর আজকের বক্তব্য সেই দাবিকে কার্যত মিথ্যা বলেই দেখানোর চেষ্টা।
মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা উদাহরণ: “আমি কি কারও ঘর দখল করে নেব?”
ধর্মীয় ভাবাবেগে রাজনীতি না করতেই তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আজ দুর্গাপুজোর সময় অনেকে দেশের বাড়িতে যান। তাই বলে কি তার বাড়িটা আমি দখল করে নিতে পারি?” এই মন্তব্যের মাধ্যমে মমতা বোঝাতে চাইলেন, অন্যের জায়গায় জোর করে ধর্মীয় আচার প্রয়োগ যেমন অনুচিত, তেমনই তা ব্যবহার করে জনমত তৈরি করার চেষ্টাও ভয়ঙ্কর।
তুলসী গাছ নিয়ে রাজনীতির ঝড় এখন তুঙ্গে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট—তিনি এই পুরো বিষয়টিকে ধর্মীয় শালীনতা এবং সম্মানের চোখে দেখেন। আর ঠিক সেই কারণেই বিজেপির পথে হাঁটেননি, বরং তুলে ধরেছেন নিজের বিশ্বাস ও প্রথাগত ধর্মীয় অনুশাসনের রূপরেখা। তুলসী কেবল গাছ নয়, হিন্দু সংস্কৃতির এক গভীর প্রতীক। রাজনীতি নয়, প্রাপ্য শ্রদ্ধা ও মর্যাদাই হোক এর সঠিক অবস্থান—এই বার্তাই যেন রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।