কলকাতার শান্ত, শিক্ষিত বলে পরিচিত কসবা এলাকাই এবার তীব্র আলোড়নের কেন্দ্রে। সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের মধ্যেই ঘটে গেল নারকীয় অপরাধ। অভিযোগ, কলেজ চত্বরে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তিনজনের—যার মধ্যে অন্যতম, এবং সবচেয়ে বিতর্কিত নাম—মনোজিৎ মিশ্র। এই মনোজিৎ শুধুমাত্র কলেজের প্রাক্তনী নন, বর্তমানে আলিপুর কোর্টে প্র্যাকটিসরত এক ক্রিমিনাল ল’ইয়ার। আর তার চেয়েও বড় কথা, ফেসবুক প্রোফাইলে গর্বভরে লেখা—“Organising Secretary, TMCP South Kolkata District”। শুধু লেখা নয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে মনোজিতের সঙ্গে তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতার ছবি।
রাজনীতির ছত্রছায়ায় ‘দাদাগিরি’?
ঘটনার সূত্রপাত ২৫ জুন। সেদিনই দক্ষিণ কলকাতা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এক নতুন নেতা। তার জয় উপলক্ষে যে অনুষ্ঠান হয়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন মনোজিৎ। সঙ্গে ছিল ল’ কলেজের TMCP ইউনিটের বহু সদস্য। সেই উৎসবের দিন সন্ধ্যাতেই কলেজ চত্বরে ঘটে গণধর্ষণের ঘটনা। এখন তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন—এই অনুষ্ঠানে নির্যাতিতা ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন কিনা। কারণ অপরাধের সময় ও স্থান এবং অভিযুক্তদের উপস্থিতি, সব কিছু মিলে যাচ্ছে সন্দেহজনকভাবে।
রাজনৈতিক দল কি দায় এড়াতে পারে?
মনোজিৎ মিশ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর—ধর্ষণ নয়, গণধর্ষণ। এই মনোজিৎ একজন তৃণমূল ছাত্রনেতা, সেটা সে নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছে। দলীয় নেতাদের সঙ্গে ছবিও পোস্ট করেছে। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের রাজনৈতিক পরিচয় কি অভিযুক্তদের সাহস বাড়ায় না? অভিযোগ উঠছে, পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রাজনৈতিক প্রভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতিতে তৃণমূলের দখল এতটাই গভীর যে, কেউ কেউ নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে ভাবতে শিখে যাচ্ছে।
শুভেন্দুর তীব্র কটাক্ষ: “কলকাতা পুলিশ দিঘায় ঘুরছে!”
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁর বক্তব্য— “পুরো কলকাতা পুলিশ দিঘায় ঘুরছে, আর কলেজ চত্বরে গণধর্ষণ চলছে! এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসনের নমুনা?” তিনি আরও বলেন, “প্রতিবার ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঘটনায় কোনও না কোনওভাবে তৃণমূল নেতা বা কর্মীদের নাম উঠে আসে। এটাই কি কাকতালীয়?”
রাজ্য প্রশাসন নীরব, তৃণমূল নেতারা ‘দায় এড়াচ্ছেন’
এখনও পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই ঘটনায় কোনও শক্ত প্রতিক্রিয়া আসেনি। দলীয় স্তরে কেউ মনোজিৎ মিশ্রের নাম উড়িয়ে দেয়নি, আবার কেউ দায় স্বীকারও করেনি। তদন্ত চললেও, জনমানসে প্রশ্ন দানা বাঁধছে—রাজনীতির পরিচয় কি অপরাধীদের রক্ষা করে দিচ্ছে?
কসবাকাণ্ডের পর রাজ্যজুড়ে ক্ষোভ
এই ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আর সুরক্ষিত নয়। রাজনীতির মদতে তরুণ নেতারা যেন আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। কসবাকাণ্ড আরও একবার প্রমাণ করল, ক্ষমতার আস্ফালন, প্রশাসনিক শৈথিল্য আর রাজনৈতিক সুবিধাবাদের মিশ্রণে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাঙ্গন কতটা বিপন্ন। প্রশ্ন শুধু এই মনোজিৎ মিশ্রকে নিয়ে নয়। প্রশ্ন, ক’জন এমন মনোজিৎ আজ রাজনীতির আড়ালে আশ্রয় নিচ্ছে?