Lakshmi Bhandar : রাজনীতির উত্তাপ যতই থাকুক না কেন, বাংলার মেয়েদের জীবনে যে প্রকল্প বাস্তব অর্থে পরিবর্তন এনেছে, তা নিঃসন্দেহে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শুরু হওয়া এই প্রকল্প রাজ্যের মহিলাদের আর্থিক স্বনির্ভরতার দিকে এক বড় পদক্ষেপ। আজ এই প্রকল্প ঘিরেই রাজ্য বিধানসভায় দেওয়া তথ্য জানিয়ে দিল, কতটা সফল হয়েছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’।
কত জন পাচ্ছেন এই ভাতা?
শিশু ও নারী কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এ নথিভুক্ত উপভোক্তার সংখ্যা ২ কোটি ১৫ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭৭৫ জন। ভাবা যায়! বাংলার প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের ঘরে ঘরে এই প্রকল্পের প্রতিফলন।
কত টাকা খরচ হয়েছে এখন পর্যন্ত?
মন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ব্যয় করেছে ৪৮,৪৮৯.৭২ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, বার্ধক্য ভাতা হিসেবে ৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৫৫ জন মানুষ পেনশন পাচ্ছেন। প্রকল্প নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এটা কোনো পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি নয়, এ হচ্ছে প্রকৃত সহানুভূতির উদাহরণ।”
ভাতার অঙ্ক কি বাড়ছে?
বিধানসভায় এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত এসেছে। জানানো হয়েছে, সাধারণ ও তপশিলি জাতিভুক্ত মহিলাদের জন্য এই প্রকল্পে মাসিক ভাতা ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকার মধ্যেই দেওয়া হয়। তবে আসন্ন সময়ে সেই ভাতার অঙ্ক বাড়তে পারে। প্রকল্পটিকে আরও সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার।
বিরোধীদের অবস্থান কী?
এই প্রকল্প নিয়ে বিরোধীরা বরাবরই সমালোচনায় সরব। বিজেপি-র পক্ষ থেকে বিকল্প ‘অন্নপূর্ণা যোজনা’-র প্রস্তাব দিয়ে ৩,০০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর ব্যাপারে বরাবর বিরূপ মনোভাব দেখিয়েছে তারা। তবুও প্রকল্পের জনপ্রিয়তায় ছিটেফোঁটাও ভাঁটা পড়েনি।
‘চলবে সারা জীবন’, বললেন মুখ্যমন্ত্রী
উত্তরবঙ্গে সম্প্রতি এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কোনও সাময়িক প্রতিশ্রুতি নয়। এটা সারা জীবনের প্রকল্প। যতদিন আমি আছি, ততদিন এটা চলবে।” তাঁর এই মন্তব্যেই স্পষ্ট, এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করেই ভবিষ্যতের ভোটের রূপরেখা সাজাচ্ছে শাসকদল।
জনপ্রিয়তা কতটা?
‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মাধ্যমে আর্থিক স্বনির্ভরতা ফিরে পেয়েছেন লক্ষ লক্ষ গৃহবধূ, মায়েরা ও অসহায় মহিলারা। গ্রাম বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের এই প্রকল্প এতটাই জনপ্রিয় যে, বহু রাজ্যে অনুকরণে মহিলাদের জন্য নতুন প্রকল্প চালুর ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, সমাজকল্যাণে সরকার যে শুধু ঘোষণা দিয়েই থেমে নেই, বরং তা রূপায়ণেও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ—তাই আবারও প্রমাণ করল ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। ভোটের রাজনীতি একদিকে থাক, কিন্তু বাস্তবিক স্তরে এই প্রকল্প বাংলার হাজার হাজার পরিবারের জীবনে আশার আলো এনেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর ‘সারা জীবন চলবে’ মন্তব্য নিঃসন্দেহে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎকে নিয়ে এক ইতিবাচক বার্তা—যা রাজনীতির বাইরে, সাধারণ মানুষের মনে প্রভাব ফেলবে বহুদিন।