TMC : ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবস, তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে এক ঐতিহাসিক ও আবেগঘন দিন। প্রতিবছর এই দিনে শহরের রাজপথে জনসমুদ্র তৈরি হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে। তবে এবারের সভার আগে চিত্র ভিন্ন। তার কেন্দ্রে এখন পোস্টার! এবং সেই পোস্টারে শুধুমাত্র একজনেরই মুখ থাকবে—তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ নাকি এবার জায়গা পাচ্ছে না।
“শুধুই মমতার ছবি থাকবে”—সুদীপের স্পষ্ট ঘোষণা
শনিবার ভবানীপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে এক প্রস্তুতি বৈঠকে হাজির ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ক্যামাক স্ট্রিট দফতর থেকে যেই পোস্টার পাঠানো হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখই রয়েছে। কারণ, অভিষেক নিজেই বলেছেন তিনি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে থাকছেন না।” এই বক্তব্যে জল্পনার আগুনে যেন নতুন করে ঘি পড়ল। অভিষেক না থাকলে কি তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান কিছুটা নড়বড়ে? নাকি এ কেবলই সভা সংক্রান্ত ‘ব্যক্তিগত’ সিদ্ধান্ত?
ছবির কূটনীতি: আগে কী ঘটেছিল?
এ প্রথম নয়। এর আগেও ‘ছবি’ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে তৃণমূল। ২০২৩ সালে নেতাজি ইন্ডোরের একটি সভায় শুধু মমতার ছবি ব্যবহার হওয়ায় কুণাল ঘোষ প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আবার ২০২৫-এর শুরুতে অভিষেকের দফতর থেকে যে ক্যালেন্ডার বের হয়, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত পিছনে রেখে বড় করে অভিষেকের ছবি ছাপা হয়। তাতেও অস্বস্তি প্রকাশ পায় দলের ভিতরে।
পরে অবশ্য রাজ্য নেতৃত্ব সেই ক্যালেন্ডার বদলে দেয়। এবং তখনও মমতার ছবি একমাত্র থাকায় কিছুটা বার্তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল—দলের প্রধান মুখ তিনি-ই।
সংগঠনের মুখ কে? নেতৃত্বের দড়ি কার হাতে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছেন—“দলের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত আমিই নেব, আগামী দশ বছর আমিই দল চালাব।” এই বক্তব্য থেকেই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ধরে নিচ্ছেন, দলে নেতৃত্বের প্রশ্নে কোনও দ্বিধা রাখতে চান না মুখ্যমন্ত্রী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান এবং একাধিক দায়িত্ব নেওয়া নিয়ে যখন ‘দুই নেতৃত্ব’ তত্ত্ব সামনে আসে, তখনই হয়তো এই বার্তা আরও জোরালো করে দিতে চেয়েছেন দলনেত্রী।
‘আত্মনিম্নতা’ না কি ‘রাজনৈতিক দূরত্ব’?
সুদীপের বক্তব্যে উঠে এসেছে—“অভিষেক নিজেই বলেছেন, তিনি ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে থাকবেন না।” এখানে প্রশ্ন উঠছে, স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানো কি রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি করছে? নাকি এটি অভিষেকের কৌশলী ‘আত্মনিম্নতা’? তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অভিষেকের গ্রহণযোগ্যতা যেমন রয়েছে, তেমনই তাঁর ত্বরিত উত্থান অনেকের পছন্দ হয়নি বলেও গুঞ্জন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত
রাজনৈতিক মহল বলছে, “এটা একটা স্পষ্ট বার্তা—দলের প্রধান মুখ এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। অভিষেক এখনো অনেকটা পথ পেরোননি, দলের মধ্যে ‘এক নেত্রী’ ভাবমূর্তি বজায় রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত।” এছাড়াও, দলের ভেতরে গ্রুপবাজি ও ব্যর্থ কর্মসূচি নিয়ে যেভাবে ক্ষুব্ধ মমতা—সেই জায়গা থেকেও হয়তো এখন নিজেই সর্বনিয়ন্ত্রক হিসেবে সামনে থাকতে চাইছেন।
তৃণমূল মানেই মমতা?
২৯ বছর ধরে ২১ জুলাই মানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গত কয়েক বছরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান দলকে একটি দ্বৈত নেতৃত্বের মুখে নিয়ে যাচ্ছিল কি? সেই সম্ভাবনা কি এবার চেপে দিলেন নেত্রী নিজেই? একের মুখে দল চালানোর বার্তা কি আরও একবার দেওয়া হল এই ছবি বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে? সময় বলবে। কিন্তু আপাতত তৃণমূলের পোস্টারে, ব্যানারে, বিজ্ঞাপনে—“একই মুখ, একটাই বার্তা—দিদিই শেষ কথা।”