চার বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে বাংলায় আবার চালু হতে চলেছে ‘জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প’ অর্থাৎ ১০০ দিনের কাজ। কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, আগামী ১ অগস্ট থেকে এই প্রকল্প ফের চালু করতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেস এই রায়কে স্বাগত জানালেও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিলেন হুঁশিয়ারি—শুধু কাজ চালু করলেই চলবে না, চার বছরের বকেয়া টাকাও ফেরত দিতে হবে।
‘চার বছর, একটা পয়সাও নয়!’
বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানান, কেন্দ্রীয় সরকার গত চার বছর ধরে রাজ্যকে এক টাকাও দেয়নি এই প্রকল্পের জন্য। মমতার কথায়, ‘‘আপনারা বাংলায় দল পাঠাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু আগে তো টাকা দিন। এটা জনগণের টাকা। আমরা এই টাকা নিজেদের পকেট থেকে দিইনি।’’
তিনি আরও জানান, ওই সময় শ্রমিকদের মজুরি রাজ্য সরকার নিজেদের কোষাগার থেকে মিটিয়েছে। সেই অর্থও কেন্দ্রের কাছ থেকে ফেরত চাওয়া হবে। ‘‘যে দিন থেকে কাজ বন্ধ হয়েছে, সেই দিন থেকে হিসাব করে পুরো টাকা দিতে হবে।’’—স্পষ্ট বার্তা মমতার।
বিজেপির প্রতিক্রিয়া: ‘লুট বন্ধ হবে, কেন্দ্র নেবে নিয়ন্ত্রণ’
এদিকে কলকাতা হাই কোর্টের রায়কে তৃণমূলের গালে ‘বড় চড়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় জানান, ‘‘রাজ্য সরকার প্রকল্পের অপব্যবহার করেছে। এখন থেকে এই প্রকল্প চলবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রায় কার্যকর করতে চাইবেন না, কারণ তিনি নিজের মতো করে এই প্রকল্প চালাতে অভ্যস্ত।’’
‘মানুষের জয়’, বলছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই রায়কে বিজেপির ‘প্রতিশোধের রাজনীতি’র বিরুদ্ধে জয় বলে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, ২০২১ সালে রাজ্যে বিজেপি হেরে যাওয়ার পরই ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ‘‘এটা কোনও শাসন ছিল না, এটা ছিল প্রতিশোধ,’’—অভিষেকের তীব্র কটাক্ষ।
তৃণমূলের দাবি: আন্দোলনের ফলেই এসেছে ন্যায়
তৃণমূল কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছে, এই রায় এসেছে দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল হিসেবেই। পোস্টে লেখা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি থেকে কলকাতার রাজপথে একের পর এক ধর্না ও বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁদের একটাই লক্ষ্য ছিল—গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে আনা।
বিজেপির পাল্টা অভিযোগ: তৃণমূলের দুর্নীতির শাস্তি
বিজেপির তরফে পাল্টা অভিযোগ, এই প্রকল্পের অর্থে তৃণমূল সরকার দুর্নীতি করেছে। সেই কারণেই কেন্দ্র অর্থ ছাড় বন্ধ করেছিল। ‘‘দুর্নীতির মাধ্যমে যে টাকা লুট হয়েছে, তা উদ্ধারের পর যাবে ভারতের সংহত তহবিলে, তৃণমূলের তহবিলে নয়,’’—মালবীয়র তীব্র কটাক্ষ।
হাই কোর্টের নির্দেশে আপাতত বাংলায় ১০০ দিনের কাজ আবার শুরু হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু রাজনৈতিক তরজার ঝড় থামার কোনও লক্ষণ নেই। রাজ্য বনাম কেন্দ্রের টানাপোড়েনের মাঝে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—প্রকৃত প্রাপকেরা কি তবে অবশেষে তাঁদের ন্যায্য পাওনা ফিরে পাবেন?