Mid Day Meal : স্কুলে দুপুরবেলার খাবার পরিবেশনের ছবি বদলে যাচ্ছে। রান্নাঘরের পাশে অপেক্ষায় এক ঝাঁক কুকুর। তাদেরও জুটছে ডাল-ভাত। শিশুদের সঙ্গে ভাগ করে খাচ্ছে তারা। অভিভাবক মহলে উঠছে প্রশ্ন—এটা কি মানবিকতা, নাকি বরাদ্দের অপব্যবহার? নদিয়া, বর্ধমান ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই প্রবণতা বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। মিড-ডে মিল প্রকল্পে ছাত্রছাত্রীদের জন্য রাজ্য থেকে যে খাবার সরবরাহ করা হয়, তার একটি অংশ নিয়ম করে দেওয়া হচ্ছে পথকুকুরদের।
‘না খাওয়ালে কামড়াবে’, যুক্তি শিক্ষকদের
স্থানীয় শিক্ষক ও রান্নার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানিয়েছেন, বেশ কিছু কুকুর স্কুল চত্বরে দীর্ঘদিন ধরেই ঘোরাফেরা করছে। তাদের তাড়াতে গেলে অনেক সময় আগ্রাসী হয়ে ওঠে তারা। বিশেষ করে শিশুদের উপর হামলার আশঙ্কা থেকে যায়। এই কারণেই রোজ রান্নার সময় তাদের জন্য কিছু খাবার আলাদা করে রাখা হয়। এক শিক্ষক জানালেন, “আমরা যখন ওদের কিছু খেতে দিই, তখন ওরা শান্তভাবে বসে থাকে। না হলে ক্লাস চলাকালীনই হুট করে ঢুকে পড়ে।”
মানবিকতা না বেআইনি ব্যবহার?
যদিও অনেকেই এটিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। তাঁদের মতে, অপ্রয়োজনীয় খাবার ফেলে দেওয়ার থেকে পথকুকুরদের খাওয়ানো অনেক ভালো। বিশেষ করে যেখানে সরকারি হাসপাতালে কিংবা স্টেশনে কুকুরদের প্রতি নিষ্ঠুরতার ঘটনা সামনে আসে, সেখানে এই রীতিকে এক ধরনের করুণা বলে মনে করছেন অনেকে। তবে অভিভাবকদের একাংশ এবং প্রশাসনিক মহলে অন্য সুর। সরকারি অর্থে বরাদ্দ করা খাবার শুধুই শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত। সেটি অন্য কোথাও ব্যবহৃত হওয়া আদৌ নীতিগত ভাবে ঠিক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একজন অভিভাবক বললেন, “সরকারি খাবার তো একদম মেপে আসে। তাহলে যদি কুকুরদেরও দেওয়া হয়, তাহলে ছাত্রছাত্রীদের ভাগে কম পড়ে না তো?”
প্রশাসনের নীরবতা
এই ঘটনা সামনে এলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে কোনও মন্তব্য প্রকাশ্যে আসেনি। জেলার মিড-ডে মিল প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। কিছু স্কুলে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, কুকুররা দিনে দুপুরে ক্লাসের সামনে পর্যন্ত চলে আসে। এর ফলে একদিকে যেমন কিছু শিশুর মধ্যে ভয় কাজ করছে, তেমনই আবার অন্যদিকে অনেকেই তাদের আদর করে ডাকছে ‘স্কুল কুকুর’ বলে। রোজকার চেনা স্কুল জীবনের এই নতুন বাস্তবতা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন অভিভাবক, শিক্ষক এবং প্রশাসন—এই প্রবণতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, এখন সেটাই দেখার।