Birbhum Politics : বীরভূমের রাজনীতিতে তাঁকেই ‘শেষ কথা’ বলা হতো। ফিরহাদ হাকিম তাঁকে ডাকতেন ‘বাঘ’। কিন্তু সেই অনুব্রত মণ্ডলেরই কি আজ দলে আর তেমন কোনও ক্ষমতা নেই? এমন প্রশ্ন উঠেছে দলীয় মহলেই। কারণ, তাঁর ডাকা বৈঠক ঘিরে প্রকাশ্যে এল দলের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ। তৃণমূল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—বীরভূমে কোর কমিটির চেয়ারপার্সন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ বৈঠক ডাকতে পারবেন না।
দিল্লির চেয়েও গম্ভীর বার্তা কলকাতা থেকে
গত শনিবার কলকাতায় এসেছিলেন বীরভূমের দুই নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখ। তাঁদের নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব—সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম। বার্তা ছিল স্পষ্ট—দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে এবার থেকে সংগঠনের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কিন্তু সেই বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই অনুব্রতর তরফে ঘোষণা—২৫ জুন বীরভূমে কোর কমিটির বৈঠক হবে। সেই বার্তা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছড়াতেই দলের ভেতর শুরু হয় অসন্তোষ।
কোর কমিটির চেয়ারপার্সনের পাশে দল
তৃণমূল নেতৃত্ব জানায়, অনুব্রত কোর কমিটির সদস্য হলেও এখন আর বীরভূম জেলা সভাপতি নন। কাজেই তিনি একা বৈঠক ডাকতে পারেন না। দলীয় শৃঙ্খলার স্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন তিনি। ফলে তাঁর ঘোষণাকে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। এই পরিস্থিতিতে স্পষ্ট নির্দেশ আসে—বীরভূমে বৈঠকের অধিকার শুধু কোর কমিটির চেয়ারপার্সন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়েরই আছে। এর বাইরে কেউ কিছু করলে তা অনধিকার চর্চা বলে ধরা হবে।
অনুগামীরা বিভ্রান্ত, নেতৃত্বে চাপা ক্ষোভ
বোলপুর তৃণমূলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যেখানে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে বৈঠকের বার্তা দেওয়া হয়েছে, সেখানে খানিক বাদেই অনুব্রত অনুগামীদের গ্রুপে ঢোকে অনুরূপ বার্তা—তবে প্রেরক হিসেবে লেখা থাকে ‘ধন্যবাদান্তে অনুব্রত মণ্ডল’। এই দ্বৈত ঘোষণা কার্যত বিভ্রান্ত করে ফেলে কর্মী-সমর্থকদের একাংশকে। দলীয় সূত্রে খবর, এমন বার্তা দলের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারে। বিশেষ করে বীরভূমের মতো সংবেদনশীল জেলায় এ ধরনের দ্বন্দ্ব দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে বলেই মনে করছেন নেতৃত্ব।
‘কেষ্ট এখন শুধুই সদস্য’—দলের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট
অনুব্রতর এই আচরণে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ বীতশ্রদ্ধ। কেউ কেউ বলছেন, ‘এটা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ছাড়া কিছুই নয়।’ অনুব্রত যে এখনও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে চান, সেটা যেমন পরিষ্কার, তেমনই দলের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণও দেখাতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু দলীয় কাঠামো তাকে আর সমর্থন করছে না।
এরপর কী করবেন অনুব্রত?
প্রশ্নটা এখন গোটা তৃণমূল শিবিরে ঘুরছে—এত স্পষ্ট বার্তার পর কী সিদ্ধান্ত নেবেন অনুব্রত মণ্ডল? দলীয় অনুশাসনে থাকবেন, নাকি ফের নিজের ‘ক্ষমতার দাগ’ দেখাতে চাইবেন? দল আপাতত অপেক্ষায়। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট—তৃণমূল এবার আর ছাড় দিতে রাজি নয়। বীরভূমে ক্ষমতার বাঘ এবার আর গর্জাচ্ছেন না, তাঁকে যেন ধরা হয়েছে ‘বাধা পোষা বাঘ’ হিসেবেই।
রাজনীতিতে ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী। অনুব্রতের এই ঘটনা তৃণমূলের অন্দরেই নতুন এক বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে—দলে নাম বড় কথা নয়, এখন নিয়মই আসল।