গরম যতই পড়ুক, বাজারের সবজি যেন তার চেয়েও বেশি জ্বলছে! ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে, শসার মত সাধারণ সবজি এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। পাইকারি থেকে খুচরো—সবজির মূল্যবৃদ্ধির জন্য একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন।
কেজিপিছু কত দাম?
বাজারে ঢ্যাঁড়সের দাম এখন ₹৫০/কেজি। ঝিঙে আর শসার দর ₹৭০/কেজি ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় অনেক পরিবারই বাধ্য হয়ে সবজি কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন নিরামিষ রান্না করছেন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে।
কে দায়ী এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য?
বাজারের সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, “আগে ₹৩০-৩৫ টাকায় যা পাওয়া যেত, এখন তা প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। আমাদের রোজগার তো বাড়েনি, তাহলে এই জিনিসপত্রের দাম কেন এত বাড়ছে?” অন্যদিকে, খুচরো বিক্রেতাদের বক্তব্য, “বাজারে আমদানি কম। গ্রামের দিক থেকে অনেক কম পরিমাণে সবজি আসছে। তার উপর পরিবহণ খরচও বেড়েছে। ফলে আমরা যদি পুরনো দামে বিক্রি করি, তাহলে লোকসান ছাড়া কিছুই থাকবে না।” কৃষকদের একাংশের অভিযোগ, “আমরা মাঠে ঘাম ঝরিয়ে সবজি উৎপাদন করি, কিন্তু পাইকারি বাজারে খুব একটা দাম পাই না। অথচ শহরে এসে সেই সবজি আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে।”
প্রাকৃতিক ও মানবিক কারণ মিলেই বিপর্যয়
এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পিছনে মূলত তিনটি কারণ উঠে এসেছে:
-
প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা – অতিবৃষ্টি বা খরার মতো পরিস্থিতিতে ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
-
সরবরাহ চেইনের জটিলতা – উৎপাদক ও বাজারের মধ্যে পরিবহণের সমস্যা, লজিস্টিক ঘাটতি, পাইকারি স্তরের মজুতদারি সবমিলিয়ে জটিল অবস্থা তৈরি করেছে।
-
কালোবাজারি ও মজুতদারি – কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম ঘাটতি তৈরি করে দাম বাড়িয়ে তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কী হতে পারে সমাধান?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষিপণ্য সরবরাহে আধুনিক লজিস্টিক ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার যৌথভাবে নজরদারি জোরদার করলে কালোবাজারি কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব। একইসঙ্গে, কৃষকদের থেকে সরাসরি কিনে শহরাঞ্চলে পাঠানোর ব্যবস্থাও জোরদার করা দরকার, যাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমে। সবজি এমন একটি উপাদান যা প্রতিটি গৃহস্থের রান্নাঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয়। সেই বাজারেই এখন হাহাকার পড়েছে। সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। নাহলে সাধারণ মানুষকে আরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে।