রাজ্যে জন্ম শংসাপত্র জারি নিয়ে ক্রমবর্ধমান দুর্নীতির অভিযোগের জেরে এবার কড়া পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আর শুধু পঞ্চায়েত প্রধানের সই থাকলেই চলবে না। প্রত্যেক আবেদন যাচাই করবে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। তবেই মিলবে বার্থ সার্টিফিকেট। সূত্রের খবর, পাঠানখালি-সহ রাজ্যের একাধিক পঞ্চায়েতে ভুয়ো জন্ম শংসাপত্র তৈরি করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে সুবিধা তোলার অভিযোগ ওঠে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে হইচই পড়ে যায়।
বিএমওএইচ অনুমোদন বাধ্যতামূলক
নবান্নে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই নতুন নিয়ম কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার থেকে পঞ্চায়েত প্রধানরা সরাসরি জন্ম শংসাপত্রে সই করতে পারবেন না। তাঁদেরকে ওই আবেদন পাঠাতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্লক মেডিকেল অফিসার অফ হেলথ (BMHO)-এর কাছে অনুমোদনের জন্য। সেখানে আবেদন যাচাই করে তবেই দেওয়া হবে ছাড়পত্র। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি হবে রাজ্যের জন্ম-মৃত্যু পোর্টাল-এর মাধ্যমে।
মাঠে নামবেন আশা কর্মীরা
শুধু কাগজপত্র নয়, এবার থেকে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি যাচাই করবেন আশা কর্মীরা। শিশুর পরিবার এবং তার অস্তিত্ব এলাকার বাস্তব পরিস্থিতিতে খতিয়ে দেখা হবে। সেই রিপোর্ট জমা পড়বে বিএমওএইচ-এর অফিসে। তারপরেই শুরু হবে সার্টিফিকেট তৈরির প্রক্রিয়া। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজ্য সরকার নিশ্চিত করতে চাইছে, আর যেন কোনওভাবে ভুয়ো জন্মের নথি দিয়ে কেউ সরকারি প্রকল্পের সুবিধা না পান।
কী কী নতুন নিয়ম?
১. পঞ্চায়েত প্রধান আর সরাসরি জন্ম শংসাপত্র ইস্যু করতে পারবেন না।
২. প্রত্যেক আবেদন যাবে ব্লক মেডিকেল অফিসারের অনুমোদনের জন্য।
৩. আশা কর্মীরা মাঠে গিয়ে শিশু ও পরিবারের অস্তিত্ব যাচাই করবেন।
৪. রিপোর্ট জমা পড়বে বিএমওএইচ-এর কাছে, তারপরেই অনলাইন ছাড়পত্র।
৫. সব কিছু হবে রাজ্যের Birth-Death পোর্টালের মাধ্যমে, যেন কোনো ধোঁকা ধরা না পড়ে।
নবদম্পতির জন্য সতর্ক বার্তা
নতুন বাবা-মায়েদের কাছে এই নিয়ম নতুন হলেও ভবিষ্যতের জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান জন্মের পর জন্ম শংসাপত্র তৈরির সময় যেন সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে জমা দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দেরি হতে পারে নথি পাওয়ার ক্ষেত্রে।
প্রশাসনের বার্তা: ভুয়ো নথি তৈরির দিন শেষ
নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পঞ্চায়েতস্তরের দুর্নীতি ও অসৎ উদ্দেশ্যপূর্বক সার্টিফিকেট জারি করার প্রবণতা রুখতেই এত কড়াকড়ি। ভবিষ্যতে আরও ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের দিকে এগোবে রাজ্য, যাতে কোনওভাবেই ম্যানুয়াল কারচুপি না চলে।
এতদিন পঞ্চায়েতেই সার্টিফিকেট মেলে যেত, অনেকে সেই সুযোগ নিয়েই ভুয়ো জন্ম সার্টিফিকেট তৈরি করতেন। এবার মাঠপর্যায়ে যাচাই, স্বাস্থ্য দফতরের সিল ও অনলাইন অনুমোদন—এই ত্রিস্তরীয় ফিল্টার পেরিয়ে তবেই মিলবে জন্ম শংসাপত্র। নবান্নের এই কড়া সিদ্ধান্তে সমাজের একাংশ স্বস্তি পেলেও, কিছু দুর্নীতিপরায়ণ মহল যে অস্বস্তিতে পড়বে তা বলাই বাহুল্য।